শিরোনাম
শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইবাদতে অবিচল নিষ্ঠা

মুফতি আমজাদ হোসাইন

ইবাদতে অবিচল নিষ্ঠা

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা (আন্তরিকভাবে) অঙ্গীকার করে যে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার ওপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা এসে বলতে থাকে, ভয় কর না, দুশ্চিন্তা কর না, আর সেই জান্নাতের সুখবর গ্রহণ কর, যার ওয়াদা তোমাদের কাছে করা হয়েছে। আমরা এই দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু আর পরকালেও। সেখানে (জান্নাতে) আমাদের মন যা আকাঙ্ক্ষা করবে এবং যা কিছু চাইবে তা সবই পাবে।  এসব সেই আল্লাহর তরফ থেকে মেহমানদারি হিসেবে পাবে, যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অতি দয়াবান।’ (সূরা হা-মীম-আস-সিজদাহ : ৩০-৩২) অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা বলে, আল্লাহ আমাদের রব এবং তারা এ কথার ওপর অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয়ও নেই, তারা দুশ্চিন্তাও করবে না। তারাই দুনিয়ায় যে কাজ করছিল তার পরিণামে জান্নাতবাসী হয়ে চিরকাল সেখানে থাকবে। (সূরা আহকাফ : ১৩-১৪) আলোচ্য আয়াত দুটির মধ্যে (ইস্তেকামাত) শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে, মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক উলামায়ে কেরামরা বলেন, ‘ইস্তেকামাত’ শব্দটি অতি সংক্ষিপ্ত হলেও মহান রাব্বুল আলামিন শরিয়তের যাবতীয় বিধিবিধান, হালাল-হারাম ও মাকরুসহ সবকিছু এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাফসিরে মাজহারিতে হজরত উমর (রা.)-এর একটি বাণী উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘ইস্তেকামাত’ শব্দের অর্থ হলো আল্লাহতায়ালার যাবতীয় বিধিবিধান তথা আদেশ ও নিষেধের ওপর নিষ্ঠার সঙ্গে অবিচল থাকা এবং তা থেকে পলায়ন করার পথ বা বাহানা তালাশ না করা।

ইস্তেকামাত শব্দের আরও ব্যাখ্যা জানতে গিয়ে তাফসিরে কাশশাফ খুলে দেখি, এই কিতাবের লেখক ইস্তেকামাতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অত্যন্ত সুন্দর লিখেছেন। তিনি লিখেন, ‘যারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে যে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কোনোই উপায় নেই। আমার বলতে কিছুই নেই, সবই তাঁর কর্তৃত্বাধীন। তাঁর রহমত ব্যতিরেকে আমি একটি শ্বাসও ছাড়তে পারি না’। এ কথাটির একমাত্র দাবি হলো মানুষ আল্লাহর ইবাদতে অটল-অবিচল থাকবে এবং মানুষের মন-মানসিকতা বিন্দুমাত্রও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিচ্যুত হবে না। কারণ আমাদের বুঝতে হবে এ দুনিয়া হলো পরীক্ষার জায়গা। আল্লাহপাক এখানে বিভিন্নভাবে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করবেন এমনটিই স্বাভাবিক। পরীক্ষা ছাড়া কোনো দিনই খাঁটি জিনিস জানা যায় না। তিনি মানুষকে আরাম-বেরাম দিয়ে, রোগ-বিরোগ দিয়ে, ধনী-গরিব বানিয়ে পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষার মধ্যে আল্লাহর ইবাদতে অটল-অবিচল থেকে যে ব্যক্তি ইবাদতে মন লাগাতে পারে সেই মূলত সফল ব্যক্তি। আমরা যদি আম্বিয়ায়ে কেরামের পর, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহেদিন, হক্কানি পীর আওলাদের ইবাদতের প্রতি লক্ষ্য করি তাহলে বিনাবাক্যে বলতে হবে যে, তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন আল্লাহর ওপর একিন-বিশ্বাস এবং ইবাদতে অটল-অবিচলতার কারণেই। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, হজরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে ইসলামের ব্যাপারে এমন কিছু কথা বলে দিন যেন আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আর সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে না হয়। তিনি বললেন, ‘বল আমি আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি, তারপর এ কথার ওপর অবিচল থাক’। অর্থাৎ মুসলমান হওয়ার পর ইবাদতে সবসময় নিজেকে আবদ্ধ রাখ। ইবাদতে নিজেকে আবদ্ধ রাখার সময় হলো বালেগ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। যেমনটি পবিত্র কোরআনে সূরা হিজরের ৯৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এবং পালনকর্তার ইবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা (মৃত্যু) না আসে।’ আমাদের সমাজে অনেককে নামাজ পড়ার কথা বললে উত্তর দিয়ে এই বলে যে, আরে ভাই বয়স হোক তখন দেখা যাবে। অথচ এ লোকের বয়স কিন্তু চল্লিশের ঘরে। তাই তো কবি কতই না সুন্দর বলেছেন, ‘হে ব্যক্তি! তোমার জীবনের ৪০টি বছর অতিবাহিত হলো, এখনো তুমি শৈশবকালের অভ্যাস ছাড়তে পারনি, তুমি সর্বদাই নিজের খেয়ালখুশির আনুগত্য করেছ, এক মুহূর্তের জন্যও তুমি ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করনি। এই অস্থায়ী দুনিয়ার ওপর ভরসা কর না। জামানার ধ্বংস থেকে তুমি নিরাপদ হইয়ো না’। আবার অনেকে মনে করে শেষ বয়সে বায়তুল্লাহ শরিফের হজ করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যাব। তার কর্ম দেখলে মনে হয় তার হায়াত তার আয়ত্তে। যেখানে এক সেকেন্ডের কোনো ভরসা নেই, সেখানে এই ভাই শেষ বয়সের ওপর নির্ভর করে বসে আছে। অথচ সাহাবায়ে কেরামরা রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করে করে আমল জেনে নিতেন এবং সেই আমলের ওপর অটল-অবিচল থাকতেন, যা আলোচ্য হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম। প্রিয় পাঠক! শাবান ও রমজান মাস আমাদের খুবই কাছে। এই মাসদ্বয়কে আমরা গণিমত মনে করি। বিশেষ করে পবিত্র রমজানে যাতে রোজা, তারাবিসহ যাবতীয় ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করতে পারি তার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসার সিজনকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে। কেন এত পরিশ্রম? তার বিশ্বাস আছে এই সিজনের এক মিনিটও যদি নষ্ট হয় তাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। অনুরূপ একজন মুমিন-মুসলমানের জন্যও পবিত্র রমজান মহামূল্যবান সম্পদ। এক মিনিটও যাতে নষ্ট না হয় এর জন্য এক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের ইবাদতে অটল-অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।  আমিন।

     লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর