শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামে পরিবেশ রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

মুফতি মাওঃ মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, খতিব : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

আমরা আজ ভুলতে বসেছি যে, আমাদের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগানদানকারী অতি প্রয়োজনীয় বৃক্ষরাজিরও প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া  এই বৃক্ষ যে আমাদের বায়ু দূষণ হ্রাসেও একটি বড় ভূমিকা রাখে, নাগরিক হিসেবে আমরা তা ভুলেই যাই। আমাদের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে বাড়ির আঙিনায় একটা বৃক্ষরোপণ করা যে অতীব জরুরি এ বিষয়টাও আমরা প্রায় ভুলে যেতে বসেছি।

পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপণ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বন ও গাছপালার উপকারিতা অপরিসীম। ইসলাম বন সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপণের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

বন-জঙ্গল থেকে আমরা জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করি। ফলমূল আমাদের এবং লতাপাতা পশুর আহার্য হিসেবে ব্যবহার হয়। গাছপালা প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে। গাছপালা মানুষের প্রতি আল্লাহতায়ালার আপন কুদরতের বৈচিত্র্যেও নিদর্শনস্বরূপই। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, যিনি (আল্লাহতায়ালা) তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপাদন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা থেকে (নিজের প্রয়োজনমতো) আগুন জ্বালিয়ে নিতে পার। (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৮০)।

পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে : ‘আচ্ছা যে আগুন তোমরা জ্বালিয়ে থাক, সে বিষয়ে তোমরা ভেবে দেখেছো কি? তোমরাই কি এই বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি করি। আমি একে করেছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু।’ (সূরা ওয়াকিয়া, ৬৫ : ৭১-৭৩)।

পবিত্র কোরআনে উদ্ভিদ ও গাছপালা নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনাও রয়েছে। উদ্ভিদের যে পুরুষ-স্ত্রীভেদ আছে তা আজ থেকে পাঁচশ বছর আগেও বিশ্ববাসীর জানা ছিল না। অথচ কোরআন মাজিদে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় এ তত্ত্বটি প্রকাশিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—  ‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন চলার পথ। তিনি আকাশ থেকে ভারি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা ইদগত করেন বিভিন্ন শ্রেণির উদ্ভিদ জোড়া জোড়া হিসেবে।’ (সূরা তাহা-৫৩)।

হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বৃক্ষ রোপণকে চলমান সাদাকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘যখনই কোনো মুসলিম গাছ লাগায় বা শস্য বোনে এবং এ থেকে মানুষ, পশুপাখি তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপণকারীর) জন্য একটি সাদাক হিসেবে পরিগণিত হয়। এমনকি ফল চুরি হলে রোপণকারীর সাদাক হিসেবে গণ্য হবে। (বুখারি ও মুসলিম)।

এমনকি বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ইরশাদ করেছেন : ‘যখন তুমি দেখতে পাচ্ছ কিয়ামত সংঘটিত হতে যাচ্ছে, তখনো তোমার যদি বৃক্ষ চারা থাকে তবে সেটি রোপণ কর।’ তিনি আরও বলেছেন : বন ও বন্য পশুপাখি আল্লাহর দান ও শোভাবর্ধন। তাই রসুলুল্লাহ (সা.) এগুলোকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মক্কা মাকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারায় এক একটি বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। ওইসব এলাকার গাছপালা কাটা এবং সেখানে পশুপাখি শিকার আজও নিষিদ্ধ।

মুসলিম বিজয়ীরা যে দেশে গিয়েছেন, সে দেশকে গাছপালা দ্বারা সবুজ-সতেজ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। প্রধানত কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরিফ থেকেই তারা এ কাজে অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন।  মুসলিম ইতিহাসে এর প্রচুর নজির রয়েছে।

সর্বশেষ খবর