সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শ্রমই সফলতার চাবিকাঠি

হাফেজ কারি মাওলানা মুফতি মো. ওলিউল্লাহ পাটওয়ারী

শ্রমই সফলতার চাবিকাঠি

জীবিকা অর্জনের অন্যতম উপায় হচ্ছে শ্রম। এ কারণেই মহানবী (সা.) শ্রম বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আনাস (রা.)  বলেন, একদা এক আনসারী সাহাবি নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে কিছু চাইলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তোমার ঘরে কি কোনো কিছু নেই? উত্তরে সাহাবি বললেন, হ্যাঁ একটি কম্বল আছে, যার একাংশ আমি পরিধান করি এবং অপর অংশ শয্যারূপে ব্যবহার করি। তাছাড়া পানি পান করার জন্য একটি পানপাত্রও আছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে এ দুটো জিনিসই আমার কাছে নিয়ে এসো। সাহাবি তার উক্ত দুটো জিনিস আনলে নবী (সা.) তা নিজে হাতে নিয়ে উপস্থিত লোকদের মধ্যে এর নিলাম ডাকলেন এবং বললেন, এগুলো খরিদ করবে কে? এক সাহাবি বললেন, আমি এগুলো এক দিরহাম দিয়ে নিতে রাজি আছি। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এক দিরহামের চেয়ে অধিক দিয়ে নেওয়ার জন্য কে রাজি? এ কথাটি তিনি দুইবার বা তিনবার বললেন। তখন এক সাহাবি বললেন, দুই দিরহাম দিয়ে নেওয়ার জন্য আমি রাজি আছি। রসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বস্তু দুটি দিয়ে তার থেকে দুই দিরহাম গ্রহণ করলেন। তারপর তিনি এ দিরহাম দুটি আনসারী সাহাবিকে দিয়ে বললেন, এর একটি দিয়ে তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খাদ্য ক্রয় করে তাদের দিয়ে এসো। আর অপরটি দিয়ে একটি কুড়াল খরিদ করে এনে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দিলে তিনি নিজ হাতে এসে হাতল লাগিয়ে দিলেন এবং বললেন, জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে থাক। আর আমি যেন তোমাকে ১৫ দিনের মধ্যে না দেখি। নবী (সা.)-এর নির্দেশে সাহাবি জঙ্গলে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে তা বাজারে এনে বিক্রি করতে লাগলেন। তারপর ১০ দিরহাম উপার্জন করে তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে এলেন এবং এর কিছু দিয়ে কাপড় খরিদ করলেন এবং বাকি দিরহাম দিয়ে খাদ্যদ্রব্য খরিদ করলেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, অপরের কাছে ভিক্ষার দরুন কিয়ামতের দিনে তোমার চেহারায় দাগ নিয়ে আসা অপেক্ষা জীবিকার্জনের এটা অনেক বেশি উত্তম পন্থা। এখানে লক্ষ্য করার ব্যাপার হচ্ছে যে, রসুলুল্লাহ (সা.) উক্ত সাহাবিকে ভিক্ষার পরিবর্তে পরিশ্রম করে কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তদুপরি তিনি শ্রম বিনিয়োগের কার্যকর পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এমনিভাবে সমাজের বেকার সমস্যা সমাধানেও রসুলুল্লাহ (সা.) বাস্তব ভূমিকা রেখেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ কিছুমাত্রও লজ্জার ব্যাপার নয়, বরং এ হচ্ছে নবীদের সুন্নাত। প্রত্যেক নবীই দৈহিক পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। মুসতাদরাকে হাকেম গ্রন্থে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, হজরত দাউদ (আ.) বর্ম তৈরি করতেন। হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হজরত ইদরিস (আ.) সেলাই কাজ করতেন এবং হজরত মূসা (আ.) রাখালের কাজ করতেন।  উপরোক্ত হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। শ্রম যদি নীচু ধরনের বিষয় হতো, তাহলে নবীদের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ জাতীয় কাজ সম্পাদন করাতেন না।

সুতরাং উপরোক্ত কথার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শ্রমই হচ্ছে সফলতার চাবিকাঠি।

খতিব : বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর