ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় কামরুল ইসলাম কাজল নামের এক যুবলীগ নেতা এবং তার পরিবারের সদস্যরা এক গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে প্রমাণ করেছে প্রভাবশালীদের দাপটের কাছে সাধারণ মানুষ কতটা অসহায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গৃহবধূ নির্যাতনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠে চরফ্যাশন থানা হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়। তারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়েরকৃত মামলার দুই নম্বর আসামি যুবলীগ নেতার ভাই জামালকে গ্রেফতার করে। তবে অপকর্ম ও নির্যাতনের মূল হোতা মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা কাজলকে পুলিশ খুঁজেই পায়নি। নির্যাতিত গৃহবধূ ও তার স্বজনদের দাবি যুবলীগ নেতাকে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেফতার করছে না। নির্যাতিতা গৃহবধূর অভিযোগ কাজল ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি জানাজানি হলে গৃহবধূকে তার স্বামী বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গত বুধবার গৃহবধূ বিয়ের দাবি জানালে কাজল এবং তার ভাই বোন ও মা তাকে বাড়ির আঙ্গিনায় গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। মুমূর্ষু অবস্থায় এলাকাবাসী বিকালে নির্যাতিত নারীকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করে। বুধবার রাতেই গৃহবধূ বাদী হয়ে চরফ্যাশন থানায় ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগে মামলা করলেও পুলিশ দুই দিন কোনো আসামিকে গ্রেফতারই করেনি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে লম্পট যুবলীগ নেতার এক ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলার চরফ্যাশনে ধর্ষণের প্রতিকার চাওয়ায় একজন গৃহবধূকে গাছে বেঁধে পৈশাচিক কায়দায় যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের বেশিরভাগ গ্রাম এলাকার প্রভাবশালীদের দাপটের এটি একটি সাধারণ চিত্র। এ ধরনের ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় দেয়। সামাজিক মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা ছড়িয়ে না পড়লে এ ক্ষেত্রেও হয়তো অপরাধীরা পার পেয়ে যেত। মামলার দুই দিন পরও আসামিদের গ্রেফতারের বাইরে রাখা সে ধারণারই জানান দিয়েছে। আমরা আশা করব পুলিশ তাদের সুনামের স্বার্থেই আসামিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাবে। নির্যাতনকারীদের কেউ যাতে পার না পায় তেমনটিই তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।