শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
পাঠক কলাম

রুখতে হবে জঙ্গিবাদ

আবদুর রশিদ

রুখতে হবে জঙ্গিবাদ

সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কারও কারও ঘাড়ে জঙ্গিবাদের ভূত চেপেছে। সুখে থাকলে ভূতে কিলায় প্রবাদের যথার্থতা প্রমাণ করতে তারা প্রবাসজীবনে গড়ে তুলেছিলেন এক জঙ্গি সংগঠন। বেরসিক সিঙ্গাপুর পুলিশের কাছে তা ধরা পড়ে। ১৩ জঙ্গির আটজন এখন সে দেশের শ্রীঘরে। পাঁচজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। তারাও এখন বাংলাদেশি শ্রীঘরের অতিথি।

বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে চরমপন্থার বিরোধী। জঙ্গিবাদ এ দেশে থাবা বিস্তার করেছে বিদেশি অপশক্তির হাত ধরে, তাদের অর্থায়নে।

জঙ্গিবাদের উত্থানে জঙ্গি অর্থায়ন ভূমিকা রাখছে এবং দুনিয়ার সব দেশের জন্য তা এক সাধারণ সত্যি। বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের ভূত তার নোংরা কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারছে আর্থিক মদদের কারণে। এ বাস্তবতা মনে রেখেই বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অর্থ যাতে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয় না হয় তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ারি করে বলা হয়েছে, নির্দেশনা পালনে ব্যত্যয় ঘটলে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসের অর্থায়নবিরোধী আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনাটি তাত্পর্যের দাবিদার। বাংলাদেশে উগ্রধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসীদের নেতৃত্বেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বেশ কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভূমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিম্ন থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী এও একটি ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ রয়েছে, দেশে এ ধরনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক এবং দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেও তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। জঙ্গিবান্ধব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়বদ্ধ কার্যক্রমের নামে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করে তার সিংহভাগই চলে যায় রাষ্ট্রদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী ওই উগ্রচক্রের হাতে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধু নয়, হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকেও জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দিকগুলোর বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি গুরুত্বের দাবিদার হলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারির অভাব রয়েছে। জঙ্গিবাদ এ মুহূর্তে মানবসভ্যতার জন্য এক বড় হুমকি। জঙ্গিবাদের অপনায়করা জঙ্গিবাদের বিকাশ ঘটিয়ে সভ্যতার কণ্ঠনালি টিপে ধরতে চায়। এই নোংরা ভূত ইতিমধ্যে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, পাকিস্তানসহ আরও বেশ কিছু দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে ফেলেছে। গণতন্ত্র, মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত জঙ্গিবাদকে ঠেকাতে এর অর্থায়ন বন্ধে আরও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষত দেশের অন্যতম শ্রমবাজার সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদের থাবা বিস্তার একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। এ উদ্বেগের অবসানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে হবে। বন্ধ করতে হবে জঙ্গি অর্থায়ন।

সর্বশেষ খবর