আবহাওয়ার অনভিপ্রেত পরিবর্তন উষ্ণতা যেমন বাড়াচ্ছে তেমন বাড়িয়ে চলেছে ঝড় ও প্লাবনের আশঙ্কা। বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধির পেছনেও অনেকাংশে উষ্ণতার বিষয়টি দায়ী। নদী শুকিয়ে যাওয়া জলাভূমি ভরাট ও গাছপালা কমে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় সেলসিয়াস বেড়েছে। বিশেষ করে বর্ষা আসার আগের মে মাসে তাপমাত্রা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। বাড়ছে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রপাত সৃষ্টি হচ্ছে। বজ্রপাতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সারা দেশে অন্তত ৫৭ জন মারা গেছেন। দেশের জানা ইতিহাসে দুই দিনে বজ্রপাতে এত বিপুল মানুষের প্রাণহানির ঘটনা অতীতে কখনো ঘটেনি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পৃথিবীতে বজ্রপাতে যে সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারান তার এক-চতুর্থাংশই এখন বাংলাদেশের। তারপরও বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ভাবা হচ্ছে না সরকারিভাবে। ফলে বজ্রপাতে ঠিক কী পরিমাণ জীবনহানি ঘটেছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই বললেই চলে। আবহাওয়া অধিদফতরের মতে, মে মাসে কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে। ১৯৮১ সালের মে মাসে গড়ে নয় দিন বজ্রপাত হলেও ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে গড়ে বজ্রপাত হয়েছে এমন দিনের সংখ্যা বেড়ে ১২ দিনে দাঁড়িয়েছে। আর হিসাবটা মৃত্যুর সংখ্যায় ধরা হলে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৪৭৬ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় দেশের বেশির ভাগ গ্রাম এলাকায় বড় গাছ থাকত। তাল, নারিকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নিত। ফলে মানুষের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা কমত। মুঠোফোনের ব্যবহারও বজ্রপাত বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। কেন বজ্রপাত বাড়ছে তা নির্ণয়ের উদ্যোগ থাকা উচিত। আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধেও থাকতে হবে সতর্কতা।