বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা

উজানে পানি প্রত্যাহার বন্ধ হোক

উজানে পানি প্রত্যাহারের পরিণতিতে রাজশাহীতে এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর বুক চিরে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। বরেন্দ্র অঞ্চলের সিংহভাগ খালবিল নদীনালা শুকিয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। বহু এলাকায় গভীর নলকূপেও পানি মিলছে না। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী খরা মৌসুম জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশের ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ওই চুক্তি অনুযায়ী মাত্র তিন বছর পানি মিলেছে। বাকি বছরগুলোতে ফারাক্কা পয়েন্টে পানির সংকট থাকায় বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে, যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানি। এ ছাড়া এ শুষ্ক মৌসুমের ৩১ মে পর্যন্ত উভয় দেশ ১০ দিনওয়ারি ভিত্তিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গঙ্গার উৎস থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত অনেকগুলো বাঁধ আর খালের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তার অশুভ প্রভাবে পদ্মা অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। শুধু ফারাক্কা নয়, কানপুরে গঙ্গা ব্যারাজ ও হরিদ্বারে গঙ্গার পানি প্রত্যাহারে নির্মিত কৃত্রিম খালসহ অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করেছে ভারত। ফারাক্কার উজানে উত্তর প্রদেশের কানপুরে গঙ্গার ওপর আরও একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশ ও বিহারে সেচের জন্য প্রায় চারশ পয়েন্ট থেকে পানি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব পয়েন্ট থেকে হাজার হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে গেছে। বাংলাদেশ পানির ‘ন্যায্য হিস্যা’ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত নেপালের কোশি থেকে শুরু করে ফারাক্কা পর্যন্ত সুদীর্ঘ পথে পানি প্রত্যাহারের যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তা বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। উজানে পানি প্রত্যাহার বন্ধ তো দূরের কথা, ভারত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহারের পথে এগোচ্ছে। ভারতের পানি সম্পদমন্ত্রী সম্প্রতি এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।  অস্তিত্বের স্বার্থে পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ভারতের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ ও সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো হেলাফেলা কাম্য হওয়া উচিত নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর