বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

নষ্ট হচ্ছে ইলিশের স্বাদ

নদ-নদীর পরিবেশ দূষণ রুখতে হবে

মাছের রাজা ইলিশ। এ তত্ত্বের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন এমন একজন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশের মানুষ তো ইলিশ নিয়ে আবেগ ও অনুভব করেন। কারণ ইলিশ জাতীয় মাছ। এ মাছের সঙ্গে জড়িত জাতীয় অহংকারের বিষয়টিও। ইলিশ মূলত একটি সামুদ্রিক মাছ। সমুদ্র তীরবর্তী বহু দেশেই পাওয়া যায় এই মাছ। তবে বিশ্বের মোট ইলিশ সম্পদের ৯৫ শতাংশই পাওয়া যায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জলসীমায়। আর বিশ্বের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ইলিশই মেলে বাংলাদেশে। ২০০১-২০০২ সালে  বাংলাদেশে যেখানে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন, তা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টনে। শতকরা হিসাবে এ বৃদ্ধির হার ৭৫ শতাংশ। দেশের প্রায় সব বড় বড় নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়। তবে পদ্মার ইলিশ তুলনাহীন। স্বাদে গন্ধে পদ্মার ইলিশ সত্যিকার অর্থেই আলাদা। যে কারণে বাংলাদেশ তো বটেই পশ্চিম বাংলার মানুষও তাদের রসনা পূরণে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ খোঁজেন। দুনিয়ার যে সব দেশে বাঙালির বসবাস তারাও বাংলাদেশ থেকে পাঠানো পদ্মার ইলিশের জন্য উন্মুখ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে নিরাপদ আবাসস্থল সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দিন দিন এ আবাসস্থল অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। সঠিক মাত্রায় নাব্যতা সংরক্ষণ ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত না করা, ইলিশ অধ্যুষিত জলাশয়ের আশপাশে অপরিকল্পিত উপায়ে বাঁধ নির্মাণ, নদী ভরাট এবং শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে দূষণের ফলে ইলিশের স্বাদ-গন্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জাহাজ ভাঙা বর্জ্যদূষণ, উপকূলে চলাচলকারী দেশি-বিদেশি জাহাজের জ্বালানি ও বর্জ্য নির্গত হওয়াও বড় বিপদ বয়ে আনছে ইলিশের ওপর। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ইলিশ ক্ষেত্রগুলোর আশপাশের কৃষিজমিতে যথেচ্ছ সার ও কীটনাশকের ব্যবহারও ক্ষতি বয়ে আনছে। ইলিশের গুণমান আকার ও স্বাদ নির্ভর করে নদীর পানির প্রবাহ গভীরতা ও স্বচ্ছতার ওপর। দেশের নদ-নদীগুলো দূষণের শিকার হওয়ায় ইলিশের স্বাদ নয় গায়ের রঙেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া রাখছে। জাতীয় মাছ ইলিশের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে নদ-নদী দূষণমুক্ত রাখাসহ ইলিশবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতেও এগিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর