সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি রোধের কসরত চালাচ্ছে সরকার। সরকারি সেবা খাত আর দুর্নীতি সমার্থক শব্দ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। সাধারণ মানুষ সরকারি খাতে সেবা নিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হয়। ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না কোনো সরকারি দফতরে এটি একটি ওপেন সিক্রেট। এমনকি ঘুষ দিয়েও সেবা দেওয়া হয় না এমন নজির কম নয়। সরকারি আর্থিক খাতগুলো লুটপাটের মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে অন্তত চার দশক ধরে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে শত শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সে টাকা লোপাটের ঘটনাও ঘটছে। সারা দেশের ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, রাজউকসহ বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও গলা পর্যন্ত ডুবে আছে দুর্নীতির পঙ্কে। স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের কাজই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে লুটপাটের ফন্দিফিকির বের করা। সেবা খাতের মধ্যে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজির কাহিনীই বেশি শোনা যায়। ভবন নির্মাণের ত্রুটিপূর্ণ নকশা সহজেই অনুমোদন দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। ৬ তলার অনুমোদন দিয়ে কেউ ৮ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করলেও অবৈধ অর্থের বিনিময়ে তা জায়েজ করার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এগিয়ে। পাসপোর্ট অধিদফতর, তিতাস, ওয়াসা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। পিছিয়ে নেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেও অর্থের বিনিময়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে। এসব দুর্নীতি রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) মাঠে নামানো হচ্ছে। সরকারি খাতে দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদের ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে তারা। গত কয়েক দিনে সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেড়শ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে দুদক। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দুর্নীতি রোধে সরকার উদ্যোগী হচ্ছে এটি একটি আশাজাগানিয়া ঘটনা। এটি যাতে শেষ পর্যন্ত আইওয়াশ হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।