ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হলেও থামছে না সহিংসতা। মাহে রমজানে দেশের মানুষ যখন আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির সিয়াম সাধনায় রত, তখন মানুষশকুন নামের সন্ত্রাসীরা নির্বাচনোত্তর সংঘাতে একের পর এক লাশ ফেলছে। জয়পুরহাটে মুখোশধারীদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত সদর উপজেলার ভাদশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ গত রবিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এক সময়কার ফটোসাংবাদিক এ কে আজাদ নির্বাচিত হওয়ার আগে-পরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদককে বলেছিলেন, তার জীবন হুমকির মুখে। নিরাপত্তা চাইলেও পুলিশ সহায়তা করছে না। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় শুক্রবার বিজয়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যের সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা। দ্বিতীয় দফার সংঘাতেও প্রাণ হারান একজন। জয়পুরহাটের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিজয়ী হন। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার পরও তাকে নিরাপত্তা না দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এখন মত্স্যন্যায় সমাজের বাসিন্দা কিনা সে প্রশ্ন মনে উঁকি দেওয়াও স্বাভাবিক। এক চেয়ারম্যান ও দুই সমর্থকের মৃত্যু নিয়ে ইউপি নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা ১৪০-এ দাঁড়াল। কথিত নির্বাচনের ষষ্ঠ পর্ব শেষ হওয়ার পর আমরা এই কলামে লিখেছিলাম, ‘ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে সন্ত্রাস সহিংসতা ও মানুষের প্রাণ কাড়ার মহড়া আপাতত শেষ হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক সন্ত্রাসের বরপুত্ররা মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলার মহড়া থেকে বিরত থাকলে, তা দেশবাসীর প্রতি তাদের কৃপা বলে বিবেচিত হবে।’ আরও তিন খুনের পর যে কারোরই উপলব্ধি হবে মানুষশকুনদের নোখর যেন কিছুতেই নিবৃত্ত হওয়ার নয়। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমনকি সরকার সব পক্ষের দায়-দায়িত্বহীন মনোভাবের শিকার হচ্ছে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ। সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন দোহাই শকুনগুলোকে থামান। আর কোনো লাশ মানুষ দেখতে চায় না।