বিশ্বের ছয় কোটি মানুষই এখন বাস্তুচ্যুত। সোজা কথায় পৃথিবীর প্রায় এক শতাংশ মানুষ এ মহা দুরবস্থার শিকার। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২ কোটি ১৩ লাখ মানুষ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। শরণার্থীদের ৫৪ শতাংশই এসেছে তিনটি দেশ সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে। গৃহযুদ্ধকবলিত এ তিনটি দেশই ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রতিকৃতিতে পরিণত হয়েছে। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তুরস্কে ২৫ লাখ, পাকিস্তানে ১৬ লাখ, লেবাননে ১১ লাখ, ইরানে প্রায় ১০ লাখ, ইথিওপিয়ায় পৌনে ১০ লাখ ও জর্ডানে প্রায় ৭ লাখ শরণার্থী রয়েছে। এ ছাড়া কেনিয়ায় প্রায় ৬ লাখ, উগান্ডায় ৪ লাখ ২৮ হাজার, চাদে ৪ লাখ ২১ হাজার, সুদানে ৩ লাখ ২২ হাজার, ইরাকে ২ লাখ ৮৮ হাজার ও সিরিয়ায় দেড় লাখ শরণার্থী রয়েছেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৩ জন ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। শরণার্থী সমস্যা দুনিয়ার বহু দেশে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশও এ সমস্যার প্রত্যক্ষ শিকার। বর্তমানে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে এবং শরণার্থীর মতো অবস্থায় আছেন ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত আছেন ৩২ হাজার ৮৯৪ জন রোহিঙ্গা। বাকি ২ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। সরকারিভাবে করা রোহিঙ্গা শুমারিতেও এই সংখ্যা ৩ লাখ বলে তথ্য মিলেছে। এদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুনিয়ার দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাত শরণার্থী সমস্যাকে তীব্রতর করে তুলছে। যতদিন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যুদ্ধ সংঘাত ও ঘৃণার আবহ থাকবে ততদিন শরণার্থী সমস্যা অপ্রতিরোধ্যভাবে নিজের উপস্থিতি জানান দেবে। শরণার্থী সমস্যার সমাধানে বিশ্বসমাজকে দায়িত্বশীল হতে হবে। গোত্রগত জাতিগত সংঘাতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে কড়া মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংঘাত ও হানাহানিতে বাইরের মদদ বন্ধের উদ্যোগ থাকা দরকার। প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সব রাষ্ট্র এবং সমাজকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। শরণার্থী সমস্যার ইতি ঘটানোর সেটিই হবে প্রকৃষ্ট উপায়।