সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বর্তমান সময়ের সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। গুলশান, শোলাকিয়া, কল্যাণপুরে দুর্বিনীত দুর্বৃত্তদের দাম্ভিকতা জাতীয়ভাবে আমাদের চরম এক বাস্তবতার মুখোমুখি করে দিয়েছে। পুরো জাতি আজ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত, হতভম্ব ও স্তম্ভিত। চাপা আশঙ্কায় সবাই ভীতসন্ত্রস্ত। মূলত গভীর ষড়যন্ত্র ও কুটিল চক্রান্তের মাধ্যমে ইসলামপ্রিয় জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করে তোলা হচ্ছে এবং বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় ইসলাম ও এর অনুসারীরা ইসলামবিরোধীদের যেসব ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে বর্তমান সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্বাচীন মুসলিম তরুণদের সম্পৃক্ত করাও সেসবের অন্যতম। ইসলাম শান্তিপ্রিয় উদার মানবিক ও পরম সহিষ্ণুতার ধারক এক মহান আদর্শ। সুতরাং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনোই অবকাশ নেই। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জন্ম উগ্রবাদসৃষ্ট বাড়াবাড়ি থেকে; ইসলাম কোনো ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়িকে পছন্দ করে না। সীমালঙ্ঘন যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন নিন্দনীয়। তাই তো ঐশী মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা—৮৭)।
সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করো না। (সূরা আরাফ—১৫১)।
ইসলাম মানবপ্রাণকে এত গুরুত্ব দেয় যে, একজনের প্রাণ হরণ করা গোটা মানব জাতির প্রাণহরণের নামান্তর বলে ঘোষণা দিয়েছে। চলমান সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। মানবতার মুক্তির দিশারি, বিশ্বশান্তির দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে নারী, শিশু, পুরোহিত বা ধর্মগুরুদের হত্যা করা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।ইসলামী ভূরাষ্ট্রে বসবাসকারী অথবা মুসলিম দেশে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণপূর্বক বসবাসকারী ভিনদেশি বিধর্মী নাগরিকের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করা দেশের সব নাগরিকের দায়িত্ব। তাদের কোনোভাবে উত্ত্যক্ত করা, কষ্ট দেওয়াও ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী হারাম। কাজেই অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা কোনোক্রমেই জিহাদ হতে পারে না। বরং ইসলামী শরিয়ত অনুসারে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করাই সত্যিকারের জিহাদ।
লেখক : প্রিন্সিপাল
দারুল উলুম মাদ্রাসা
মিরপুর-১৩।