রাজধানী থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে আবাসিক এলাকা। রাজউকের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকাকে গড়ে তুলতে যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছিল তার সবকটিই এখন পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক এলাকার চেহারা ধারণ করেছে। গুলশান, বানানী, উত্তরা, বারিধারা সর্বত্রই বিরাজ করছে অভিন্ন চিত্র। ধানমন্ডি আর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকাও পরিণত হয়েছে পুরোপুরি বাণিজ্যিক এলাকায়। সেখানে কোনটা আবাসিক আর কোনটা বাণিজ্যিক এলাকা, তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও আবাসিক ভবনের নিচতলা কারখানা কিংবা ওয়ার্কশপ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দোতলা, তিনতলা ও চারতলাকে বানানো হয়েছে মার্কেট বা বিপণি কেন্দ্র। ওপরের তলাসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে। একই স্থানে শিল্প-বাণিজ্য-আবাসিকের সহাবস্থান চলছে কিম্ভূতকিমাকারভাবে। রাজধানীর সবচেয়ে অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশানে রয়েছে অর্ধশতাধিক স্কুল ও কলেজ, অন্তত দেড় ডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় ২০টি ব্যাংক, শপিং মল, কমিউনিটি সেন্টার, শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। চাইনিজ ও ফাস্টফুডের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও অন্যান্য দোকানও অসংখ্য। সব মিলিয়ে গুলশান আরও কয়েক বছর আগেই পুরোপুরি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। আশার কথা দেরিতে হলেও এ বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে এবং এ ব্যাপারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার প্রায় ১৭শ’ অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থাপনার মালিক রাজউকের প্লট বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবাসিক এলাকা থেকে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত স্থাপনার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অননুমোদিত স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। দেশের রাজধানীকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর স্বার্থে এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। রাজধানী ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হলে সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হতে হবে। চলমান অভিযান যাতে থেমে না যায় কিংবা আপসের চোরাবালিতে আটকা না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।