শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মানবতার ধর্ম ইসলাম

মুফতি আমজাদ হোসাইন

মানবতার ধর্ম ইসলাম

ইসলাম মানুষকে মানবতা, ইনসানিয়াত শিক্ষা দেয়। মনুষ্যত্বহীন মানুষের কোনোই মূল্য নেই। মানুষ মানুষের জন্য এগিয়ে যাবে, বড় ছোটকে স্নেহ করবে ও ছোট বড়কে সম্মান করবে। মানুষের সামাজিক অধিকার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে আল্লাহর জমিনে শান্তির সুশীতল ছায়া। পৃথিবী থেকে সব প্রকারের হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি হানাহানি দূর করেছে। ইসলাম শুধু নিজ ধর্মের লোকদের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেনি বরং অন্য ধর্মের লোকদের ওপরও অন্যায় ও জুলম করতে কড়াভাবে নিষেধ করেছে। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টির সেরা মানবরূপে সৃষ্টি করার পর ইমানের বলে বলিয়ান করেছেন। তিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী সায়্যেদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়িন মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আমরা মুসলমান। আমাদের পরিচয়, আমরা আমাদের নবী (সা.)-এর প্রকৃত অনুসারী। আমাদের ধর্ম ইসলাম। ইসলামের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখা জেনে আমলে রূপান্তরিত করাই ইসলামের দাবি। আমরা নবীজীর উম্মত হিসেবে তিনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বাতলিয়ে গেছেন। সাহাবায়ে কেরামদের বিশাল জামাতের মাধ্যমে কোরআন-হাদিসের বাস্তব রূপরেখা রেখে গেছেন। পবিত্র কোরআনে সূরা আলে-ইমরানের ১০২ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুসলমান! অন্তরে আল্লাহকে সেভাবে ৎয় কর, যেভাবে তাকে ৎয় করা উচিত। সাবধান অন্য কোনো অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু না আসে। বরং এ অবস্থায় যেন তোমাদের মৃত্যু আসে যে, তোমরা মুসলমান’। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা একটি মূলনীতির আলোকপাত করেছেন, তা হলো— তাকওয়া বা আল্লাহর ৎয় অর্থাৎ তার অপছন্দনীয় কাজকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা। নিজেকে দীন-ইসলামমুখী করা। বদ-দীন, শারারাত ও খোরাফাত থেকে নিজেকে, অপর ভাইকে  সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করা। ইমানী হালাতে যেন মৃত্যু হয় তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনে প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুুল (সা.) ইরশাদ করেছেন। তাকওয়ার অর্থ হলো- প্রত্যেক কাজেকর্মে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা। জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহকে হাজের নাজের মনে করা। কখনো ও কোনো অবস্থাতেই আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া। (বাহরে মুহিত), আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার তার সব অবলম্বন করা। আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয় সেজদার মাধ্যমে। হজরাতে আম্বিয়ায়ে কেরামরা আল্লাহপাককে সার্বক্ষণিক নিজের সঙ্গে আছে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। যেমন হজরত মুসা (আ.) বনি ইসরাইলকে বলেছিলেন ইন্না মাইয়া রাব্বি (আমার রব আমার সঙ্গে আছেন)। হজরত রসুলে আরাবি (সা.) মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করার সময় পথিমধ্যে সোরাকা বিন মালেককে দেখার কারণে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছিলেন, সে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের কাছে এসে পড়বে। তখন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেন, লা-তাহযান ইন্নাল্লাহা মায়ানা (কোনো চিন্তা কর না আমাদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন)। পবিত্র কোরআনের অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনি থেকেও অধিক নিকটবর্তী’ (সূরা কাফ : ১৬), বস্তুত আল্লাহর ৎয় ও নৈকট্য অর্জন হয় ইবাদতের মাধ্যমে। আর আল্লাহর ৎয় সৃষ্টি ও ইবাদতের স্বাদ ওই ব্যক্তির ভিতরে থাকে যার মধ্যে এত্তেবায়ে সুন্নত তথা সুন্নতের অনুসরণ আছে। সুন্নতের মহব্বত তখনই আসবে যখন মুসলমান জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থাৎ পোশাকে-লেবাসে, চলনে-বলনে খানাপিনায় রসুুল (সা.)-এর ভালোবাসা অন্তরে স্থান দেবে এবং সুন্নতি জীবনযাপন করবে। কোনোভাবেই সুন্নত থেকে পিছপা হবে না। আল্লাহ অখুশি হন এমন কোনো কাজে সে নিজেকে লিপ্ত করে না। আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে এসেছে, হজরত রসুলে মকবুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে কোনো ব্যক্তি যে জাতির সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করবে, সে কেয়ামতের দিন তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লামা আবদুর রউফ মানাবী (র.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় স্বীয় কিতাব ফয়জুল কাদিরে বলেন, অন্যের সভ্যতা গ্রহণ করার অর্থ হলো, তাদের সবকিছু  গ্রহণ করা। তাদের রীতিনীতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। তাদের চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে পোশাকে-লেবাসে এবং বেশভূষায় তাদের তরিকা গ্রহণ করা। প্রকৃত মুসলমান তো সে-ই, যার ভিতরে ইমানী চেতনা ও জবানে ইমানের স্বীকৃতি আছে। বাস্তব জীবনে ইসলামী জীবনধারণ করে চলে। নববী আদর্শে জীবন গঠন করে। সে কখনো অশান্তির পথে হাঁটতে পারে না। সর্বদা শান্তির পথে চলবে। শান্তির পথে মানুষদের দাওয়াত দেবে। ইসলাম যেহেতু শিরক, বিদআত ও কুসংস্কারকে কোনোভাবেই সাপোর্ট করে না, মুসলমানরা তা কখনো গ্রহণ করতে পারে না। প্রিয় পাঠক! একটু ভেবে দেখুন তো আমাদের কি একদিন মরতে হবে না? আল্লাহর সামনে হিসাব দেওয়ার জন্য একদিন দাঁড়াতে হবে না? অবশ্যই মরতে হবে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। নিজের সব কর্মের পুরোপুরি হিসাব দিতে হবে। তাই আমরা সব মুসলিম ভাই কোরআন-হাদিস সমর্থিত সব ধরনের আমল করি। কোরআন-হাদিস সমর্থিত নয় এমন কাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকি। সঠিক পদ্ধতিতে আমল করার জন্য কোরআন-হাদিস বোঝার চেষ্টা করি। উল্লিখিত বিষয়গুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমাদের সামনে পথচলা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সব ধরনের শিরক, বেদআত ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর