রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির নতুন কমিটি আশা জাগাতে পারল কই?

কাজী সিরাজ

বিএনপির নতুন কমিটি আশা জাগাতে পারল কই?

জাতীয় কাউন্সিল এবং নতুন কমিটি ঘোষণার পর বিএনপি নতুন উদ্যম-উদ্দীপনায় সামনে এগোবে বলে একটা ধারণা সাধারণ্যে ছিল। নেতা-কর্মীদের মনেও আশা জেগেছিল। কিন্তু সংকট বিএনপির পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক বাড়ছেই। বলা চলে শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও একটা দুর্যোগকাল চলছে দলটির। ৩৮ বছর বয়সী দলটির ১৯তম দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল হওয়ার কথা ২০১৬ সালে।  কিন্তু এবার হলো তাদের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। নানা কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল পিছিয়ে যেতে পারে। দেশের প্রধান দুই দলের অপরটি আওয়ামী লীগ। তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার সামরিক স্বৈরাচারী শাসন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড, এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসন, বিএনপি শাসনামলে বৈরী পরিস্থিতি ইত্যাদি কারণে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়মিত কাউন্সিল করতে পারেনি। ১৯৭৮ সালে ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে জন্ম নেওয়া দল বিএনপিও কম বিপদের সম্মুখীন হয়নি। তাদের দলের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগে একটা সুবিধা আছে যে, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শগত কোনো দ্বন্দ্ব ও বিরোধ নেই। সিপিবির মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, নূহ-উল-আলম লেনিন প্রমুখ যারা এখন আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন তারা দলে ‘শরণার্থী’। নিজেদের আলাদাভাবে কিছু করার চিন্তা ও সাহস কোনোটাই তাদের নেই। এটা হতে পারত আদর্শিক কারণে। সে বিভেদ অনেক আগে থেকে তাদের মধ্যে কেটে গেছে লীগ-সিপিবি-মস্কোপন্থি মুজাফফর ন্যাপের সমন্বয়ে একদলীয় বাকশাল গঠনের পর। কাজেই রাজনৈতিক মতপার্থক্যগত কোনো কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে তারা কাউন্সিল করতে পারেনি, তা নয়। তবে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই। আবদুল মালেক উকিল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, দেওয়ান ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে এক সময় আমরা চারটি আওয়ামী লীগের (আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশালসহ) অস্তিত্ব দেখেছি। পরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা হলেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব সম্পূর্ণ নিরসন হয়েছে বলা যায়নি কখনো। ওয়ান-ইলেভেনের পর তা স্পষ্ট হয়েছিল। দলের বেশ কয়েকজন ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান তখন সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নিয়মিত কাউন্সিল বৈরী সময় ও পরিস্থিতি বাদ দিয়ে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণেও কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। কেননা, দলে যারা গণতন্ত্র চর্চার পক্ষে এবং একক কর্তৃত্ববাদিতাকে দলের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন তারা সব ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ। রাজনীতি ও দল তাদের নেতার আসনে বসিয়েছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ ছাড়া তাদের অন্য কেউ সুপারইম্পোজ করে নেতা বানিয়ে দেননি। ফলে তাদের সঙ্গে বংশধারায় রাজনীতিতে আসা নেতৃত্বের মধ্যে একটা মিসট্রাস্ট বিভিন্ন সময় কাজ করেছে। তবে দুই-তিন বছর পর পর দলের নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের সামনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল বৈরী পরিস্থিতি।

বিএনপির ক্ষেত্রেও সংকট বহুবিধ। জিয়াউর রহমানের হত্যাজনিত পরিস্থিতি, পরে এরশাদের নয় বছরের স্বৈরশাসনামল, ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার আমল এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শাসনামল কোনোটাই বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। তবে এটা সত্য যে, এরশাদ আমল ও শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে বিএনপি রাজনীতির মাঠে সদর্পে বিচরণ করেছে। দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে খুব একটা বাধা ছিল না। বেগম খালেদা জিয়া দুবার পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন। অন্তত চারটি দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল তখন করতে পারত বিএনপি। কিন্তু তা হয়নি। বিএনপিতেও কর্তৃত্ববাদী ‘শাসন’ বিদ্যমান। গণতন্ত্রের ন্যূনতম চর্চা নেই দলে। ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের আধা পয়সার মূল্য নেই। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে মুক্তিযুদ্ধ এবং জামায়াত প্রশ্নে। রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত লড়াই আছে সূচনা থেকে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চমৎকারভাবে সবকিছু হ্যান্ডলিং করেছিলেন এবং সবাইকে এমনভাবে একোমোডেট করেছিলেন যে, মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব তখন দলের কোনো ক্ষতি করেনি। বিএনপির এমন অনেক সমালোচনা করে প্রতিপক্ষ যে, দলটির জন্ম নাকি ক্যান্টনমেন্টে। এ সমালোচনা একেবারেই অবান্তর ও নিষ্ঠুর। একটি রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিক সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দলটি গঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়া তার ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য গঠন করেছিলেন ১৯ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ। ১৯ দফা বাস্তবায়ন পরিষদকে তার রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা বলা যায়। পরবর্তীকালে এ ১৯ দফা বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে আরও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় জাগদল। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সে দলের আহ্বায়ক হন। ১৯ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ ও জাগদলে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরই প্রাধান্য ছিল। পরবর্তীকালে ১) জাগদল, ২) ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ৩) ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, ৪) মুসলিম লীগ (শাহ আজিজের নেতৃত্বাধীন অংশ), ৫) লেবার পার্টি এবং ৬) রসরাজ মণ্ডলের তফসিলি ফেডারেশন— এ ৬টি দল নিয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও পরে এ ফ্রন্টকে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তর ঘটানো হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নামে। দল গঠন প্রশ্নে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি বিভক্ত হয়ে যায় এবং কাজী জাফর আহমদ ফ্রন্ট মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন, দলে ও সরকারে থেকে যান ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী। পরে ইউপিপি থেকে মন্ত্রী হন কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন। শাহ আজিজের সঙ্গে মুসলিম লীগের মুষ্টিমেয় লোকই যোগ দিয়েছিল বিএনপিতে। মশিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে যান সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ। ইউপিপি থেকে ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরী ও কাজী জাফর আহমদ যখন জিয়ার ফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন, ইউপিপির রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া প্রমুখ তার বিরোধিতা করে ইউপিপি ছেড়েছিলেন।

মেনন-রনো পরে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করলেও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া তাতে যোগ দেননি। তিনি পরে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে এবং প্রায় এক দশক দলের মহাসচিব ছিলেন। আনোয়ার জাহিদও বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় নেতৃত্বে অভিষেক হওয়ার পর। বিবরণটা এ জন্যই দিলাম যে, পাঠক লক্ষ্য করলে তাতে অনুধাবন করতে পারেন, বিএনপির মূল শক্তিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শিবিরের রাজনৈতিক শক্তি। শাহ আজিজের নেতৃত্বাধীন অংশের সঙ্গে অপর অংশের দ্বন্দ্ব শুরু থেকে থাকলেও আগেই বলেছি, জিয়াউর রহমানের সময়ে তা কখনো বিরোধের পর্যায়ে গড়ায়নি। এ দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বেগম খালেদা জিয়ার আমলে। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপিতে যোগদান করার পর দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলের মহাসচিব থাকাকালে এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। দলের ডানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীলরা গড়ে তোলে তথাকথিত ‘কট্টরপন্থি’ গ্রুপ। মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থক বিশাল অংশকে তারা আখ্যায়িত করে ‘লিবারেল’ গ্রুপ নামে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারের আমলে তারা (সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থিরা) সরকার ‘হঠানোর’ নামে হঠকারী পন্থা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে মান্নান ভূঁইয়া সর্বশক্তি দিয়ে তার বিরোধিতা করেন। তিনি ওই ধরনের হঠকারিতার সর্বনাশা পরিণাম পার্টি চেয়ারপারসনকে বোঝাতে সক্ষম হন। দলটি তখন একটি বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়। ২০১৫ সালে এসে জানুয়ারি-মার্চে সেই হঠকারী লাইনে গিয়ে সর্বনাশা ভুলটি করে বসে বিএনপি। পর্যবেক্ষকদের মতে, দলের ক্ষমতালিপ্সু ডানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার পর থেকে বিএনপিতে দক্ষিণপন্থিরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দলের ভিতর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, প্রগতিশীল গণতন্ত্রীরা দিন দিন নেতৃত্ব কাঠামোয় গুরুত্ব হারায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু কর্মী-সংগঠক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতন্ত্রীদের সংখ্যাই এখনো বেশি। দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল অংশটি ভর করে দলের মূল নিয়ন্ত্রকদের ওপর। আপারহ্যান্ড পেতে থাকে তারা। নানা ভুল-ত্রুটি, দুর্যোগ বিপর্যয়ের পর (সাত বছর পর) বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছে গত ১৯ মার্চ। সাড়ে চার মাস পর ঘোষিত হয়েছে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এতে পরিপূর্ণ বিজয় লাভ করেছে দলের ডানপন্থি অংশ, যারা আগামী দিনগুলোতে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চায়। দলের ১৯ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য পদের মধ্যে আগের ১৫ জন বহাল রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে মন্ত্রী, মিনিস্টার ছিলেন, বড় বড় পদ পদবিধারী ছিলেন। তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই একটা কথা বলা যায়, এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অতীতের ছাত্র আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনসহ জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখ করার মতো কোনো গৌরব তাদের নেই, জনগণের কাছে তাদের সেই স্বীকৃতিও নেই। ধারণা করা হয়েছিল দলের এই দুর্বলতা ঘুচানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে স্থায়ী কমিটির চারটি শূন্য আসনে গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, কবির হোসেন, সেলিমা রহমান প্রমুখকে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু তা হয়নি। যে দুটি আসন শূন্য রয়েছে তাতেও তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমান ও আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। দলের অন্যান্য পদ-পদবি বণ্টনেও নানা অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার খবর আসছে মিডিয়ায়। ইতিমধ্যে মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ তিনজন পদত্যাগ করেছেন। অনেকে সন্দেহ করছেন, পদত্যাগের তালিকা বাড়তে পারে। দলের অনেক ত্যাগী কর্মী নেতা বঞ্চনার কথা বলছেন, কেউ কেউ বলছেন পদাবনতি ও অবমূল্যায়নের কথা। মারাত্মক যে বিষয়টি দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো, এতদিন বলা হয়েছে পার্টি চেয়ারপারসন নিজে কমিটি ঠিক করছেন। তাহলে বঞ্চনা, অবহেলা, অবমূল্যায়নের অভিযোগটা যাচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। অথচ ক্ষুব্ধ দলীয় অ্যাক্টিভিস্টরাই অভিযোগ করছেন যে, দলের ‘তিন ব্যক্তি’ নিজেদের পছন্দের লোকদের (পছন্দটা নানা কারণে) ভালো ভালো জায়গায় পদায়ন করেছেন। ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষুব্ধদের উদ্দেশে বলেছেন, বিক্ষোভ করে কোনো লাভ নেই। বঞ্চিত ও অবমূল্যায়িতদের আগামী জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সেই কাউন্সিলও যদি সাত/আট বছর পরে হয় তখন শাহ মোয়াজ্জেম, আবদুল্লাহ-আল নোমান, কবির হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সেলিমা রহমান, গোলাম আকবর খোন্দকারদের বয়স কত হবে? সাত বছর পর কাউন্সিল, সাড়ে চার মাস পর কমিটি গঠন বিএনপির জন্য নতুন সংকটই সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। আপাতত কোনো বিস্ফোরণ না ঘটলেও যদি আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আকস্মিক ঘোষণা আসে তখন টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যেতে পারেন বিএনপির ‘মালিক পক্ষ’। বিষয়টা মাথায় রেখে দলটা এখনো গুছিয়ে নেওয়ার চিন্তা করতে পারেন তারা। মান্নান ভূঁইয়ার অনুসারী সংস্কারপন্থিরা দলের ভিতরে-বাইরে মতাদর্শগতভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি বড় রাজনৈতিক গ্রুপ। ভিতরে যারা আছে তারা অবজ্ঞার শিকার। বাইরে যারা আছেন তাদের সম্পর্কে ‘ক্ষমতাবান’ চক্রের মনোভাব নেতিবাচক। অথচ তাদের প্রায় সবাইর পায়ের নিচে মাটি আছে, অনেকে বারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন এদের নাকি দলে প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলে কোনো একজন ছোট কর্মীরও ‘প্রয়োজন নেই’ এমন কথা ইতিমধ্যে কোনো দলে শোনা যায়নি। অথচ অভিযোগ আছে যারা এসব বলছেন পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের পরিচয় করাতে হবে। বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতে হবে আগামী নির্বাচনের জন্য। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ‘ঢাউস’ কমিটিতে তার যথাযথ প্রতিফলন নেই। নতুনদের অন্তর্ভুক্তিতে কারও আপত্তি নেই, বিপত্তি দেখা দিয়েছে পুরনোদের প্রতি অবজ্ঞায় অবহেলায় বাইরে থাকা অধিকতর যোগ্য নতুনদের অবমূল্যায়নে। রাজনৈতিক প্রশ্নেও কমিটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নতুন কমিটি এই বার্তাই দিল যে, বিএনপির নেতৃত্বে জঙ্গিবিরোধী যে জাতীয় মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। মোর্চাটি হওয়ার কথা ছিল জামায়াতে ইসলামীকে বাইরে রেখে। এ উদ্যোগের সঙ্গে যারা ছিলেন নতুন কমিটিতে তারা যথাযথ মূল্য পাননি। নতুন কমিটি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক— উভয় দিক দিয়েই বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সরকারবিরোধী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার ঐক্য গড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।  সিপিবি, বাসদ, আ স ম রবের জেএসডি ইতিমধ্যেই নেতিবাচক মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে। বিকল্প ধারা, গণফোরামও যে অনুকূল মনোভাব দেখাবে তা বলা যায় না।  নতুন কমিটি বিএনপিকে কোথায় নিয়ে যায় তা-ই এখন দেখার বিষয়।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর