বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানুষ মানুষের জন্য

মানবিকতার উদাহরণ একজন সারোয়ার

মানুষ মানুষের জন্য পঙিক্তমালার সার্থক উদাহরণ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন পিকআপ চালক সারোয়ার। ২৯ বছরের এই যুবক বাড্ডার দামাইখালে হাবুডুবু খাওয়া দুই শিক্ষার্থীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত নিজেই পানিতে তলিয়ে যান ঘূর্ণি স্রোতের টানে। চার ঘণ্টা পর দমকল বাহিনীর সদস্যরা তার নিষ্প্রাণ দেহ উদ্ধার করে খাল থেকে। সোমবার দুপুর ১২টায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একদল ছাত্র ফুটবল খেলছিল খাল পাড়ের এক মাঠে। একপর্যায়ে ফুটবল খালে পড়ে গেলে দুই শিক্ষার্থী তা খাল থেকে উঠাতে যায়। সাঁতার না জানায় এবং খালের পানিতে তীব্র স্রোতের ঘূর্ণিপাক থাকায় দুই শিক্ষার্থী যখন হাবুডুবু খচ্ছিল তখন অন্য শিক্ষার্থীদের চিৎকারে সচকিত ওয়ে ওঠে সারোয়ার। খালের পাশে সে তখন পিকআপ ধোয়ার কাজ করছিল। সঙ্গে সঙ্গে সারোয়ার পানিতে নেমে উদ্ধার করে দুই শিক্ষার্থীকে। এরপর তাদের ফুটবল উদ্ধার করতে গিয়ে খালের ঘূর্ণিপাকে হঠাৎ করেই তলিয়ে যায়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করে দমকল বাহিনীর সদস্যরা। পিকআপ চালক সারোয়ারের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার বড় গলাকাটনিয়ায়। থাকতেন রাজধানীর ভাটারা এলাকায়। সংবাদ মাধ্যমে তার স্বজনদের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সারোয়ার ছিল পরোপকারী। মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যেত সে। চোখের সামনে দুই তরুণকে পানিতে ডুবে যেতে দেখে তাদের বাঁচাতে সে ছুটে গিয়েছিল মানবিকতার টানে। কিন্তু জিন্সের প্যান্ট পরা থাকায় এবং খালে স্রোতের ঘূর্ণিপাক থাকায় হঠাৎ করেই সে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ চার ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ডুবুরিরা তার লাশ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, হতভাগ্য সারোয়ার নতুনবাজার থেকে বনানী রোডে সিএনজি অটোরিকশা চালাত। প্রায় এক মাস ধরে সে বেকার ছিল। সোমবার পিকআপ নিয়ে খাল পাড়ে গিয়েছিল মূলত খালের পানিতে গোসল করতে। সেটি যে তার শেষ গোসল হবে তা সে ভুলেও ভাবতে পারেনি। দুই শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গের এই ঘটনা মানুষ মানুষের জন্য পঙিক্তকে সার্থকতা দিয়েছে।  জীবন থেকে বিদায় নিলেও মানবিকতার ইতিহাসে অক্ষয় উদাহরণ হয়ে থাকবে সারোয়ারদের মতো সাহসী ও পরোপকারীদের নাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর