ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অসাধু খামারিরা কোরবানির পশু মোটাতাজা করতে নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন ও স্টেরয়েড হরমোন প্রয়োগ করছে। এসব পশুর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একশ্রেণির লোভী মানুষের কাছে জনস্বাস্থ্য কীভাবে জিম্মি হয়ে পড়ছে কোরবানির গরু-ছাগল মোটাজাতকরণে ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার তারই প্রমাণ। এক দশক ধরে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে গরু-ছাগল তাজাকরণের চেষ্টা চলছে ব্যাপকভাবে। স্টেরয়েড জাতীয় হরমোনের কল্যাণে গরু-ছাগল মোটা করে তা দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মোটাতাজাকরণের জন্য গরু-ছাগলকে উচ্চমাত্রায় স্টেরয়েড খাওয়ানোর ফলে এর মাংস ভক্ষণ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, স্টেরয়েড দ্বারা মোটাতাজাকৃত পশুর মাংস খেলে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধমনী বিকল হয়ে হৃদরোগ এমনকি ব্রেনস্ট্রোকও হতে পারে। কিডনি ও লিভার বিকলসহ পঙ্গুত্বের আশঙ্কাও থাকে এ ধরনের পশুর মাংস খেলে। এমনিতেই আমাদের দেশের জনমনে ভুল ধারণা রয়েছে, কোরবানির মাংস বেশি খেলে তাতে কোনো ক্ষতি হয় না। এ ভুল ধারণার কারণে কোরবানির ঈদের সময় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। বেশি মাংস খেয়ে পেটের পীড়া এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হন। স্টেরয়েডের মাধ্যমে পশু মোটাতাজা করা হলে এবং সেই মাংস বেশি খেলে হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কোরবানির পশু বিশেষ করে গরু কেনার সময় ক্রেতারা সতর্ক থাকলে অবশ্য এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা গরুর পাঁজরের হাড় দেখা যায় এবং দুই হাড়ের মধ্যে একটা ঢেউয়ের ভাব থাকে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংসল স্থানে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে অনেক দেবে যায় যা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে হয় না। কৃত্রিমভাবে মোটা করা গরুর মধ্যে ঝিমানো ভাব থাকবে, তা স্বাভাবিক গরুর ক্ষেত্রে থাকে না। উচ্চ আদালত হরমোন প্রয়োগে গরু মোটাতাজাকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের তাদের অবহেলায় অবৈধভাবে পশু মোটাতাজাকরণ বন্ধ হয়নি। আমরা আশা করব জনস্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রশাসন সবকিছুই করবে এবং এটিকে তাদের নৈতিক কর্তব্য হিসেবে ভাববে।