ইসলামে চারটি মাসকে বিশেষভাবে সম্মান দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারটি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেদিন থেকেই চালু আছে, যেদিন আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত মাস, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের ওপর কোনো জুলুম কর না। (সূরা আত-তাওবা ৩৬)। এ চারটি মাসের মধ্যে অন্যতম হলো মহররম মাস।
মহররম মাসকে বলা হয়, আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির মাস। মহররম মাসের ১০ তারিখে মহান আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন। দুনিয়ার প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর তওবাও কবুল করেন ১০ মহররম আশুরার দিনে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তাঁরা নিষিদ্ধ গন্দম ফল খেয়ে আল্লাহর দেওয়া কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হন। তাঁদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়। আল্লাহর নির্দেশ ভঙ্গের অপরাধের ক্ষমা পেতে দিনের পর দিন আহাজারি করেন হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)। মহররমের ১০ তারিখে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। শুধু ক্ষমা করা নয়, আল্লাহর নবীরও মর্যাদা পান তিনি।
মুসলমানদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গেও মহররম তথা আশুরার সম্পর্ক রয়েছে। রাজা নমরুদ আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। আল্লাহর নবীকে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছিল রাজা নমরুদ। কিন্তু আল্লাহ আশুরার ১০ তারিখে তাঁর প্রিয় নবী ও বান্দাকে রক্ষা করেন আগুন থেকে। রাজা নমরুদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। হজরত নূহ (আ.)-এর নবুয়তের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ১০ মহররমের স্মৃতি। এ তারিখে মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পায় হজরত নূহ (আ.)-এর আমলের মানুষ। নূহ (আ.)-এর কিস্তি এই পবিত্র দিনে মাটি স্পর্শ করে। মাটিতে মানুষ আবার আবাদ শুরু করার সুযোগ পায়। হজরত ইউনূস (আ.) এই দিনে মাছের পেট থেকে রক্ষা পান। হজরত সুলাইমান (আ.) মহররম মাসের ১০ তারিখে তাঁর রাজত্ব ফিরে পান। ঈশ্বরের দাবিদার ফেরাউনের দম্ভ চূর্ণ হয় মহররম মাসের ১০ তারিখে। ফেরাউন মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের মিসর ত্যাগের অনুমতি দিলেও তার বাহিনীকে মুসা (আ.)-এর পেছনে লেলিয়ে দেন। তারা ধাওয়া করে হজরত মুসা (আ.) এবং তাঁর অনুসারীদের। আল্লাহ তাঁর নবীর দোয়া কবুল করে সে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। সাগরের মাঝে রাস্তা সৃষ্টি হয় আল্লাহর কুদরতে। সে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যান হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা। ফেরাউন বাহিনী তাদের পিছু নিলে সাগরের পানি তাদের গ্রাস করে। রসুল (সা.)-এর নাতি ইমাম হোসাইন কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়ে মানুষের হৃদয়ে আদর্শবাদিতার যে পতাকা উড্ডীন করেন তা চিরঅম্লান থাকবে। মহররমকে কেন্দ্র করে অনেকে অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেন। এটি মোটেও উচিত নয়। আদি পিতা মাতা হজরত আদম (আ.) এবং হাওয়া (আ.) এর তওবা কবুলের মাস মহররমে আল্লাহ আমাদের নফল নামাজ ও রোজাসহ তাঁর ইবাদতে মগ্ন থাকার তৌফিক দিন। মহররমে সব ধরনের বেদাত কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।লেখক : ইসলামী গবেষক।