হেস্টিংসের সঙ্গে পরিষদের অধিকাংশ সদস্যদের মনোমালিন্য থাকায় হেস্টিংসের বিরুদ্ধে চতুর্দিক থেকে উেকাচ গ্রহণ ও পরস্বাপহরণের অভিযোগ আসতে লাগল এবং এটি পরিষদে সাদরে গৃহীত হলো। এসব অভিযোগের মধ্যে মহারাজ নন্দকুমারের আনীত অভিযোগ সর্বপ্রথম পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে নন্দকুমার কলকাতা কাউন্সিলের কাছে এক পত্রে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে মীর জাফরের বিধবা পত্নী মুন্নী বেগমের কাছ থেকে তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা উেকাচ গ্রহণের অভিযোগ আনলেন। কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এ অভিযোগের তদন্ত করতে চাইলে হেস্টিংস এটি নিজ শাসন পরিষদে উত্থাপন করতে অস্বীকার করলেন। সদস্যরা এটা উত্থাপন করার জন্য তাগিদ দিতে থাকলে তিনি কাউন্সিল ভেঙে দিলেন। হেস্টিংস আত্মরক্ষার জন্য নন্দকুমারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনয়ন করলেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বেই মোহনপ্রসাদ নামক এক ব্যক্তি সুপ্রিমকোর্টে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। সুপ্রিমকোর্টের বিচারে নন্দকুমার দোসী সাব্যস্ত হওয়ায় তার ফাঁসি হলো (১৭৭৫ খ্রিঃ)।
বেভারিজ, স্যার আলফ্রেড লয়াল প্রমুখ ঐতিহাসিক মতে, হেস্টিংসের বিরুদ্ধে পরিষদের কাছে যখন একটার পর একটা অভিযোগ আসতে লাগল, তখন আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য হেস্টিংসকে নন্দকুমারের ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। ভবিষ্যতে যাতে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ আনতে সাহস না পায় তার জন্য এরূপ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। কারও কারও মতে, হেস্টিংস তার বাল্যবন্ধু প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে নন্দকুমারের ফাঁসির ব্যবস্থা করেছিলেন। হেস্টিংসের পক্ষ সমর্থনকারী ঐতিহাসিকদের মতে, নন্দকুমারের বিচার নিরপেক্ষ হয়েছিল। এ ব্যাপারে হেস্টিংসের কোনো হাত ছিল না এবং বিচারকগণ নিরপেক্ষভাবে বিচার করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিচার যে নির্ভুল হয়নি, এ কথা বলা যায়। কারণ নন্দকুমার দোষী হলেও তার ফাঁসি হওয়া সংগত হয়নি। ইংল্যান্ডের আইনানুসারে জাল করার অপরাধে ফাঁসির বিধান থাকলেও ভারতীয় আইনে এরূপ বিধান ছিল না। বাকী ও ইলিয়ট বলেন যে, ‘হেস্টিংস নন্দকুমারকে ইম্পের হাতে হত্যা করেন।’
নন্দকুমার কর্তৃক হেস্টিংসের বিরুদ্ধে উেকাচ গ্রহণের অভিযোগের পর হেস্টিংসের আচরণ, হেস্টিংসের কাছে নন্দকুমারের মৃত্যুর প্রয়োজনীয়তা এবং তার কয়েকটি উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে নন্দকুমারের ফাঁসির জন্য হেস্টিংস যে প্রধানত দায়ী ছিলেন, তা অস্বীকার করা যায় না। সমসাময়িক ও পরবর্তী ঐতিহাসিকদের মতে, নন্দকুমারের ফাঁসি হেস্টিংসের রাজত্বকালের বিরাট কলঙ্ক।