শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অমুসলিমদের জানমাল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ইসলাম

মাওলানা মুহাম্মদ সাহেব আলী

ইসলামে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো মুসলমান যাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জানমালের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য সতর্ক করে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে খুন করবে, সে বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না, যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের পথের দূরে থেকে পাওয়া যাবে।’ —বোখারি।

অমুসলিম নাগরিক হত্যার পরিণতিই যদি হয় এমন ভয়াবহ, তবে মুসলমান হত্যা কীভাবে সিদ্ধ হবে? রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! যে এমন কোনো আশ্রিত অমুসলিমকে হত্যা করে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.) যার দায়িত্ব নিয়েছেন, সে আল্লাহর জিম্মা বা দায়িত্ব খর্ব করল। সুতরাং সে বেহেশতের সুঘ্রাণও পাবে না, যদিও পঞ্চাশ বছরের রাস্তার দূর থেকে তার ঘ্রাণ পাওয়া যায়।’— তিরমিজি।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ইলাহ তথা উপাস্যদের গালি দিতে তিনি নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : “আল্লাহ ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে, তাদের তোমরা গালি দিও না। কারণ তারা সীমা লঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে বসবে (সূরা আনআম : ১০৮)।

মূলত অন্য সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর প্রতি মহানবী (সা.) যে সহিষ্ণুতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছেন, বিশ্বের ইতিহাসে তার কোনো নজির নেই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জানমাল, ইজ্জত, আব্রুর হেফাজত করা মুসলমানদের কর্তব্য বলে তিনি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতো, তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতো এবং তাদের ইজ্জত আব্রু আমাদের ইজ্জত আব্রুর মতো হেফাজতযোগ্য।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। হানাহানি ও অকারণ রক্তপাতকে ইসলামে কঠিন ভাষায় ধিক্কার দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ও অকারণ রক্তপাতকে ইসলামে গুরুতর অপরাধ বা কবিরা গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিনের হত্যাকাণ্ড আল্লাহর কাছে সারা দুনিয়া ধ্বংসের চেয়েও অধিক মারাত্মক।’ তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘জঘন্য কবিরা গুনাহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, কাউকে হত্যা করা, জাহান্নাম অনিবার্য হয় এমন মিথ্যা শপথ করা।’— বোখারি, মুসলিম, নাসায়ি।

রসুল (সা.) অপর এক হাদিসে বলেন, ‘যে লোক কোনো কথার জন্য কোনো মুসলমানকে হত্যায় সহায়তা করে, তার কপালে ‘আল্লাহর করুণা থেকে মাহরুম’ এ কথা লিখিত অবস্থায় আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করা হবে।’— মুসনাদে আহমদ।

হজরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, আল্লাহ সব ধরনের পাপ ক্ষমা করবেন কিন্তু কুফুরি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ও স্বেচ্ছায় মুমিন বান্দাকে হত্যাকারীর পাপ ক্ষমা করবেন না।—  নাসায়ি, হাকেম।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর