রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রী যা চান ওবায়দুল কাদের কি তা চান না?

কাজী সিরাজ

প্রধানমন্ত্রী যা চান ওবায়দুল কাদের কি তা চান না?

একটি রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার কতটা আন্তরিক তা প্রমাণিত হয় দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের উজ্জ্বল ভূমিকা থাকলেও তার চর্চা ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে আগ্রহ খুবই কম। রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলনের প্রমাণ মেলে নেতৃত্ব নির্মাণ ও দল পরিচালনার ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে যে কোনো দলের গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার মূল্য-মর্যাদা অপরিসীম। ওপরের কোনো চিন্তা বা ধারণা তৃণমূলে আলাপ-আলোচনা এবং গ্রহণ-বর্জনের ভিত্তিতে কেন্দ্রেই ফিরে আসে মতামত এবং সিদ্ধান্ত হয় সেভাবেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ওপর-নিচের এই সংশ্লিষ্টতা বা আন্তঃসংযোগই গণতান্ত্রিককেন্দ্রিকতা। কিন্তু রাজনীতিতে পরগাছা বণিক সম্প্রদায়, সাবেক আমলা, কালো টাকা ও অবৈধ অস্ত্রের দাপাদাপি পরিস্থিতি এখন পাল্টে দিয়েছে। তৃণমূল শুধু নয়, দলের আদর্শবাদী নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গ্রাহ্য না করার আরেকটি বড় কারণ, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে বংশধারার কর্তৃত্ববাদী অশুভ প্রবণতার ধারা। আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখন মুখে বুলি কপচালেও কার্যত জনগণের রাজনৈতিক দল নেই, দলগুলো এখন যেন এক একটি করপোরেট হাউসের আদলে পারিবারিক সম্পত্তি। শিক্ষিত, মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ও আগামীর নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব দলের কোনো পর্যায়েই তাদের প্রয়োজন নেই। এদের প্রয়োজন হয় ‘কর্মী’ নামধারী কিছু ক্যাডার, লাঠিয়াল। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে কী এক আশ্চর্য মিল। অঘোষিত চুক্তিতে আবদ্ধ যেন দুই দল। এরশাদকে স্বৈরাচার বলতে বলতে দুই দলই মুখে ফেনা তুলেছে। জনগণ তাদের ডাকে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করে তার পতন ঘটিয়েছে। সেই এরশাদের শাসনামলেও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি সব কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এরশাদ পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ডাকসুসহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, হল, কলেজের ছাত্র সংসদ। তাদের নেতৃত্বেই বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সব নেতা-কর্মী এবং গণতন্ত্রপ্রিয় সাধারণ ছাত্ররা আন্দোলনকে বেগবান করেছে। গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছে। সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র সংগঠনসমূহ বিকশিত হয়, বেরিয়ে আসে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণ নেতৃত্ব। আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দল এমনকি বাম ঘরানার বিভিন্ন দলে এখনো যে সব প্রবীণ কেরিয়ার রাজনীতিবিদ আছেন তাদের প্রায় সবাই ছাত্র আন্দোলনের সৃষ্টি। সংসদ নির্বাচন বন্ধ প্রায় ২৬ বছর। এই ২৬ বছরে আমরা ২৬ জন ডাকসু ভিপি, ডাকসু জিএস পেতাম। সব বিশ্ববিদ্যালয়, হল ও কলেজেও ২৬ জন করে ভিপি-জিএস পেতাম। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি কলেজ আছে। ২৬ জন করে ভিপি-জিএস বেরুলে ভেবে দেখুন কত নতুন তরুণ শিক্ষিত নেতা জাতি পেত। যে দল থেকেই নির্বাচিত হোক তারা তো জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখতে পারত।

স্ব স্ব দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে উঠত। কই, কখনো কি শুনেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ দেশে শিক্ষিত, মেধাবী তরুণ নেতৃত্ব বিকাশে অবরোধ তৈরির কুমতলবে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না দেওয়ার জন্য বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে? কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, হল, কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবি করেছে? আওয়ামী লীগ এতদিন ক্ষমতায়, তারাও কি এ জন্য কোনো দাবি জানিয়েছে বা আন্দোলন করেছে? না, করেনি। পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ হচ্ছে বংশধারার রাজনীতি অটুট ও অব্যাহত রাখার স্বার্থে এরা শিক্ষিত, মেধাবী নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চায় না। দু-চারটি মাথা কেনা যায়, কিন্তু শত সহস্র মাথা কেনা যায় না। তাই তাদের দরকারই নেই তেমন ‘মাথার’। তাতে আজ না হোক কাল; কাল না হোক পরশু রক্তের উত্তরাধিকার দাবিতে রাজনৈতিক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষাহীন ছেলে-পুলে, নাতি-পুতি-পুতনিরা তো তা হলে দলে দখলিস্বত্ব বজায় রাখতে পারবে না। এসব রাজনৈতিক দলে কাউন্সিল হয়, সম্মেলন হয় কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে দলের যারা ‘লাইফব্লাড’ তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বড় বড় দলগুলোতে এখনো মন্দের ভালো যে সব ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ আছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মী-সংগঠকরা চাইলেও দলের মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন না। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীনচেতা, দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত কেউ দলে ‘দলপ্রভুদের’ পাশাপাশি জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলে তাকে বা তাদের ‘সাইজ’ করে দিতে মোটেই দেরি করা হয় না। প্রধান দুই দলেরই এই প্রবণতা স্পষ্ট। বিএনপিতে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার পরিণতির কথা আমরা জানি, আওয়ামী লীগে ড. কামাল হোসেন, আমির হোসেন আমু, মরহুম আবদুর রাজ্জাক, মরহুম আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মাহমুদুর রহমান মান্নার দশাও জানা আছে সবারই। দলের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনের অপরাধে (!) বিএনপির প্রায় একযুগের সফল মহাসচিব, রাজনীতির ক্লিনম্যানখ্যাত আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। জিল্লুর রহমানের মতো প্রাজ্ঞজন তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে না থাকলে সে দলের সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপনকারীরাও হয়তো সবাই একই পরিণতি ভোগ করতেন। দলসমূহের পরিস্থিতি যখন এমন তখন রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রের চেহারা কেমন হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র বা যে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার কথা বলেছি, তা এখন ‘সোনার হরিণ’। এটা চাওয়া যায়, পাওয়া যায় না। ওপর থেকে চাপানো সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়, নতুবা ‘চাকরি যায়’। প্রভাবশালী বড় দল সরকারি হোক বা বিরোধী হোক, কালো টাকা সামাল দেওয়া, চাপ প্রয়োগ বা ক্ষমতা ব্যবহার করে বিত্তবৈভব বাড়িয়ে নেওয়া, চাঁদাবাজি-তোলাবাজি করা, অসৎকাজে প্রভাববলয় সৃষ্টি করা এবং হত্যা, ধর্ষণ, সন্ত্রাস করেও এসব দল করে নিরাপদ শেল্টার পাওয়া যায়। অবস্থান সৃষ্টির জন্য এরা কাগজের মতো টাকা ছিটায়, প্রভাবশালী কাউকে কাউকে কিনেও ফেলে। ‘যে দেবতা যে ভোগে তুষ্ট’ তাকে সে ‘ভোগ’ দিয়ে কব্জা করে। এই কালো চক্রের হাতে রাজনীতি এখন বন্দী।

 

 

বলা হয় বাংলাদেশে রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। এবার আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে রাজনৈতিক ফ্লেভার ছিল সন্দেহ নেই। সাংগঠনিক ব্যাপারে গণতন্ত্র চর্চার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের মূল্য দেওয়া হয়েছে বলে বাহ্যিকভাবে মনে হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবার সবকিছু দলনেত্রী এককভাবে চাপিয়ে দেননি বলে একটা আবহ তৈরি করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলী, মনোনয়ন বোর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়েই নির্বাচিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তবলিও কাউন্সিলে নিয়ম অনুযায়ী পেশ ও পাস করানো হয়েছে। কিন্তু এখন আলোচনা হচ্ছে যে, কাউন্সিলে অনুমোদিত বিষয়াবলি যদি সভানেত্রীর উপস্থিতিতে শুধু হাত তোলাতুলির মাধ্যমে নিষ্পন্ন না হতো, দলীয় নেতৃত্বে প্রকৃতই গুণগত পরিবর্তন হতো। গত ২৯ অক্টোবর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সবকিছু নেত্রীর পছন্দ অনুসারে হয়েছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে কাউন্সিল সম্পর্কে যে সব প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে, গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে বলে যে সব ভালো ভালো মন্তব্য কেউ কেউ করেছেন সবই যেন ফিকে হয়ে গেছে। আমারও ধারণা হয়েছিল এবং সেই ধারণার ভিত্তিতে এই অভিমত দু-এক জায়গায় প্রকাশও করেছি যে, অন্যান্য দলও এমন প্রক্রিয়া তাদের দলে অনুসরণ করতে পারে। মাহবুব-উল আলম হানিফ সে কথা বলেছেন, তাতে তো মনে হতে পারে, কাউন্সিলে যা হয়েছে তা কেবলই লোক দেখানো। সাধারণ সম্পাদক প্রশ্নে কেউ কেউ বলছে, কাউন্সিলরদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্ন এলে এ পদে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ বোধহয় পাওয়া যেত না। সভাপতিমণ্ডলীতে দুদকের দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কাউকে ঢোকানো সহজ হতো না। একটা ভালো দিক হচ্ছে, কাউন্সিলের ৭ দিনের মধ্যে প্রায় পূর্ণাঙ্গ (কয়েকটি পদ ছাড়া) কমিটিই ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত দুই দশকের আন্দোলন সংগ্রামের অনেক পরীক্ষিত ব্যক্তিই যথাযথ মূল্য পাননি। আবার অনেকে এত অতিমূল্যায়ন হয়েছেন যে, অন্যদের মধ্যে তা হতাশা ছড়িয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এতে আওয়ামী লীগের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো। অন্য বড় দল বিএনপিতেও একই অবস্থাই শুধু নয়, বলা চলে আরও খারাপ। জাতীয় কাউন্সিলের দীর্ঘদিন পর ঢাউস এক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের বরাত দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে সব। অথচ প্রচার আছে যে, পদ-পদবি বেচাকেনা করা হয়েছে। দলের ‘পায়ে’ পরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘মুসলিম লীগের জুতা’। অনেক পর্যবেক্ষক বলেন, কাউন্সিলের মতামত নিয়ে (হাত তোলাতুলি নয়) করা হলে এমন কমিটি বিএনপির হতো না।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে জাতীয় নির্বাচনের ‘মুলো’ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেমন হবে সে নির্বাচন? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের মতো? ওই নির্বাচন সম্পর্কে দেশে-বিদেশে এখনো বিরূপ সমালোচনা হয়। আওয়ামী লীগ, কখনো প্রকাশ্যে একথা এতদিন স্বীকার করেনি যে, নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত। বরং জনগণের নির্বাচিত সরকার বলেই দাবি করে আসছেন তারা। অথচ সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৫১ আসনই শুধু নয়, ১৫৩ আসনে ‘জিতে’ যেতে তাদের কোনো নির্বাচনই করতে হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি মুখরোচক যুক্তি দেখানো হলেও তার যে কোনো সারবত্তা নেই তা সচেতন মানুষ বোঝে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস পর নির্বাচন করার কিংবা এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে উচ্চ আদালতের পরামর্শ এমনকি নির্দেশ নেওয়া যেত। এতদিন পর দলের সভানেত্রীর মুখ থেকে ওই নির্বাচনটি যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল তেমন একটা পরোক্ষ স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে। কাউন্সিলে আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। কাউন্সিল শেষে সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা তিনি চান না। খুবই স্পষ্ট এবং আশাব্যঞ্জক বক্তব্য। দলের কাউন্সিলে গণতন্ত্র চর্চা কতটুকু হয়েছে, তার অনুশীলন কেমন হবে তা নিয়ে আপাতত বাদ রেখে নির্বাচন নিয়ে ভাবনাটা সুখবর করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এটা এক পক্ষের কাজ নয়, তবে সরকার পক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগের করণীয় এক্ষেত্রে বেশি। প্রশ্নাতীত, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক হয়ে গণতন্ত্রের প্রতি সরকার ও সরকারি দল আনুগত্যের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারে। এটা সবাই জানেন ও বোঝেন যে, যখন প্রশ্নবিদ্ধ সংসদে বিরোধী দল একটা আছে বটে, তবে সংসদে না থাকলেও বিএনপিই মাঠে সরকারের প্রকৃত বিরোধী দল। বিএনপি এবারও যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে আবারও একটি বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনই হবে এবং সংসদ যথাযথ মর্যাদা পাবে না বহির্বিশ্বে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও। তাই সতর্কভাবে এগুতে হবে সরকারকে। বিএনপি এখন আর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর তেমন জোর দিচ্ছে না। তারা এমন একটি ব্যবস্থা চাচ্ছে যাতে সরাসরি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনটি না হয়। সে ক্ষেত্রে এবারও একটি প্রকৃত সর্বদলীয় সরকার হতে পারে। বিএনপি সংসদে না থাকলেও টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনকালে সংসদে সরকারি দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে যেমন বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাঁচজন করে সমানসংখ্যক পছন্দের ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবারও তেমন হতে পারে। প্রক্রিয়াটা শুরু হতে পারে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে। ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান মহাবিতর্কিত ‘লীগপন্থি’ হিসেবে সমালোচিত ইসির পাঁচ সদস্য বাড়ি যাবেন। এদের স্থলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সরকার সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে পারে। না হলে জাতীয় কাউন্সিলে এবং পরবর্তীতে আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে ভালো ভালো আওয়ামী বচন জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে বিবেচিত হবে। আওয়ামী লীগের এ দুর্নাম কামানোর কি এখন প্রয়োজন আছে? দেশে গণপ্রত্যাশিত একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থাপূর্ণ অর্থবহ আলোচনার সূত্রপাত জরুরি। আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন কমিশন গঠন বা নির্বাচন নিয়ে এখন সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তা তার বর্তমান সাংগঠনিক ‘হাইট’কে নিচে নামিয়েছে। তার বক্তব্য অনেকটাই গায়ের জোরের কথা। গত নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ‘ভীষণ দুর্নাম’ ঘুচানো লীগ সরকারের জন্য খুবই জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর পৌনে তিন বছর সারা বিশ্ব ঘুরে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিশ্চয়ই তার নিরিখেই তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা তিনি চান না। তার বক্তব্যের অন্তর্নিহিত সুরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সাংঘর্ষিক। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাইলে পূর্বাহ্নেই তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তা ছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা বিদায় নেবেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে। মাঝখানে মাস হিসেবে সময় দুই মাস। আলোচনা আর হবে কবে? তবে কি এবারও একতরফা নির্বাচন করতে চান ওবায়দুল কাদের সাহেবরা? কিন্তু কী প্রয়োজন? বিএনপির যে  ছেড়াবেড়া অবস্থা তাতে তাদের ভয় পাওয়ার কি কোনো প্রয়োজন আছে? তেমন কিছু করলে বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য তা সুখকর, শুভ ফলদায়ক হবে বলে মনে হয় না।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর