বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানবাধিকারের কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই

প্রভাষ আমিন

মানবাধিকারের কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠনের পরের ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনা, একাত্তরের নয় মাসের গণহত্যা-নির্যাতন আর একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বহুমুখী ষড়যন্ত্রের কারণে পাকিস্তানকে আমি অন্তর থেকে ঘৃণা করি। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিরাও অটো সেই ঘৃণার কাতারে পড়ে যায়। তবে মূল পাকিস্তানিদের জন্য যতটা ঘৃণা, আটকেপড়া অসহায় পাকিস্তানিদের জন্য ঘৃণার সঙ্গে মিশে থাকে অনেকটা করুণাও।  জানি আমাদের কিছু করার নেই, দোষটা তাদেরই; তবুও দিনের পর দিন ঘিঞ্জি ক্যাম্পে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে দেখে আমার খারাপ লাগে। কয়েক বছর আগে মিরপুরে এক শবেবরাতের রাতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন দিয়ে ১০ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। সে ঘটনার বিচার হয়নি এখনো। তাতে অবশ্য আমি অবাক হইনি। বাংলাদেশে এমন অনেক ঘটনারই বিচার হয় না, যা আমাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। তবে আমি তখন বড় ধাক্কা খেয়েছি, আমাদের মানবাধিকার কর্মীদের নির্বিকারত্বে। সবাই এমন চুপ করেছিলেন, মনে হয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের পুড়িয়ে মারা কোনো ঘটনা নয়, তাদের বুঝি মানবাধিকার থাকতে নেই। তার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম মানবাধিকার মানে সব মানুষের অধিকার। আমি কাউকে ঘৃণা করতে পারি, কিন্তু তাদের পুড়িয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। আমি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই, ফাঁসি চাই; কিন্তু ক্রসফায়ার তো চাই না। মিরপুরের সেই ঘটনার পরের ধাক্কায় আমি বুঝলাম; মানবাধিকারের ধারণাও দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনায় পাল্টে যায়।

আগে আমার মনে হতো, বাংলাদেশে আটকেপড়া বিহারিরাই বুঝি পৃথিবীর সবচেয়ে অভিশপ্ত মানব সম্প্রদায়। কয়েকজন বকধার্মিকের ক্ষমতার লালসায় ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের পর দুই পক্ষেই ব্যাপক দেশান্তরের ঘটনা ঘটে। হিন্দুদের অনেকে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যায়। আবার ভারত থেকে অনেক মুসলমান নিজের দেশ মনে করে পাকিস্তান চলে আসে। ভারতের বিহার থেকে আসা অনেকে আশ্রয় নেয় তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই বিহারিরা আটকে পড়ে বাংলাদেশে। মাতৃভূমি বিহার তথা ভারত ছেড়ে এসেছে স্বেচ্ছায়, যে দেশকে তারা নিজেদের দেশ মনে করে সেই মূল পাকিস্তান কখনো দেখেইনি, আর এখন যেখানে আটকে আছে সেই বাংলাদেশকে তারা কখনই নিজেদের দেশ মনে করেনি। শুধু মনে না করে বসে থাকেনি, একাত্তরে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের, এখনো বাংলাদেশকে তারা স্বীকারই করে না। আর পাকিস্তান কখনই মন থেকে তাদের স্বীকার করেনি। এমন একটি উদ্বাস্তু মানব সম্প্রদায়কে অভিশপ্ত না বলে উপায় আছে? কিন্তু গত কয়েক বছর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর অব্যাহত নির্যাতন দেখে আমার বিশ্বাস জন্মেছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে অভিশপ্ত ও অসহায় মানব সম্প্রদায় এই রোহিঙ্গারা। আটকেপড়া পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে স্বীকার না করলেও বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাওয়াচ্ছে, পরাচ্ছে। অন্তত মেরে মেরে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে না। কিন্তু মিয়ানমারে তো যুগের পর যুগ রীতিমতো রাষ্ট্রীয়ভাবে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

 

 

এক লোক সারাজীবন মানুষকে জ্বালিয়েছে। মরার আগে সে তার প্রতিবেশীদের বলল, তোমাদের তো অনেক জ্বালিয়েছি। মরার পর তোমরা আমার লাশ বাঁশের আগায় ঝুলিয়ে গ্রামের সামনে রেখে দিও। এটাই হবে আমার শাস্তি। একটা লোকের শেষ ইচ্ছা বলে কথা। সবাই তা মেনে নিল এবং তাই করল। কিন্তু পরে পুলিশ এসে গ্রামের সবাইকে ধরে নিয়ে গেল। তার মানে মরার পরও সেই দুষ্ট লোক গ্রামের মানুষকে জ্বালাতে ছাড়েনি। তেমনি ব্রিটিশরা ২০০ বছর ভারতীয় উপমহাদেশকে শাসন-শোষণ করার পর যেতে বাধ্য হওয়ার আগে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে উপমহাদেশের মানুষের মনে সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপণ করে দিয়ে গেছে। ব্রিটিশরা এমনভাবে সীমানা ভাগ করল, বাংলাদেশ-ভারতকে সেই জট ছাড়াতে ৬৮ বছর লেগেছে। ব্রিটিশদের জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে এখনো জ্বলছে কাশ্মীর। রোহিঙ্গা সমস্যার বীজও ব্রিটিশদেরই রোপণ করা। ব্রিটিশরা যাওয়ার আগে তখনকার বার্মার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর যে তালিকা করে তাতে ছিল না রোহিঙ্গাদের নাম। সেই থেকে রোহিঙ্গারা বাস্তবে থাকলেও কাগজে-কলমে নেই। এ যেন উল্টো প্রবাদ, কাজির গরু গোয়ালে আছে, কেতাবে নেই। হাজার বছর ধরে রাখাইন অঞ্চলে বিকশিত হলেও মিয়ানমার সবসময় দাবি করে আসছে, তারা চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে যাওয়া। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। তারা ক্যাম্পে বাস করে। তাদের পড়াশোনার সুযোগ নেই, চাকরির সুযোগ নেই, পাসপোর্ট নেই, এমনকি সন্তান নেওয়ার স্বাধীনতাও নেই। তার মানে মিয়ানমার চাইছে, প্রাকৃতিকভাবেই রোহিঙ্গারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক, এভাবে চললে হয়তো একদিন যাবেও। কিন্তু নিশ্চিহ্ন হতে দেরি হচ্ছে বলে মিয়ানমার সরকার কিছু দিন পরপরই কোনো না কোনো উসিলায় রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে দেয়। তাদের লক্ষ্য দুটি, নগদে কিছু রোহিঙ্গাকে মেরে ফেলা, আর তাদের ভয় দেখিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে, কেউ সাগর পেরিয়ে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড যাওয়ার চেষ্টা করে। কেউ যেতে পারে, কেউ সাগরে ডুবে মরে। এভাবেই রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া অন্তত লাখ পাঁচেক রোহিঙ্গা এখন টেকনাফ-কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাস করছে। ১৬ কোটি মানুষের ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশের দুই সমস্যা আটকেপড়া পাকিস্তানি আর সীমানা পেরিয়ে আসা রোহিঙ্গা। ফিরিয়ে না নিলেও পাকিস্তান তবু আটকেপড়া পাকিস্তানিদের স্বীকার করে। কিন্তু মিয়ানমার তো তাও করে না। আর এ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, মাদক ব্যবসা করছে, জঙ্গি তত্পরতায় জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে ভুয়া পাসপোর্ট করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা অকাণ্ড করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। মানতে দ্বিধা নেই, জন্ম থেকেই নিষ্পেষণের শিকার রোহিঙ্গারা সুযোগ পেলেই নানা কুকর্ম করে যেন নিজেদের জন্মের ওপরই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ এবার অনেক কঠোর। গত ৯ অক্টোবর একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে বর্বর হামলা চালাচ্ছে। আক্রমণ চালাচ্ছে হেলিকপ্টার থেকেও। নির্বিচারে মারা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ভয়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইছে। আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া পাহারা বসিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। আপনি কল্পনায় চাইতে পারেন, কিন্তু সীমান্তবিহীন বিশ্ব তো কখনো ছিল না, কখনো হবেও না। সব স্বাধীন দেশই তার সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ যদি সীমান্ত খুলে দেয়, তাহলে মিয়ানমার তো সব রোহিঙ্গাকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। তাই বাংলাদেশের সীমান্তে কঠোর অবস্থানকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু তবুও সময়ে সময়ে বাস্তবতা পাল্টে যায়। একাত্তরে যদি ভারত তাদের সীমান্ত আটকে রাখত, আমাদের কী হতো? তবে এখানেও ভিন্ন ভাবনার অবকাশ আছে। একাত্তরে বিজয় অর্জনের পর ভারতে যাওয়া শরণার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা তো একবার বাংলাদেশে আসলে আর কখনো ফিরে যাবে না বা ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। তবে এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তাতে অন্তত অসহায় নারী-শিশু-বৃদ্ধদের আশ্রয় দেওয়ার কথাটি বিবেচনা করতে পারে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে জাতিসংঘ। বাংলাদেশ আগেও প্রমাণ করেছে, তারা মিয়ানমার সরকারের মতো অমানবিক নয়।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, সেখানে সংবাদকর্মী, মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশাধিকার নেই। তবুও নানা সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের যে ছবি আসে, তার বেশির ভাগই বানানো, তবে সেগুলোর ১০ ভাগের একভাগও যদি সত্যি হয়, তাহলেও লজ্জায় বিশ্ব সভ্যতার মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার কথা। বাংলাদেশের কাছে মানবতা আশা না করে, বিশ্বের সবার উচিত আর সব কাজ ফেলে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো, মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া। মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।

মিয়ানমারে একজন গণতন্ত্রকামী নেত্রী আছেন, অং সান সু চি তার নাম, তিনি আবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও জিতেছেন। নে উইনের সামরিক শাসনামলে দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ ছিলেন সু চি, অবরুদ্ধ ছিল মিয়ানমারও। তাই রোহিঙ্গাদের ওপর তখনকার হত্যাযজ্ঞ খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন, কখনো সু চি ক্ষমতায় এলে বুঝি বদলে যাবে মিয়ানমার। সু চি ক্ষমতায় এসেছেন, মিয়ানমার বদলেছেও, মিয়ানমারে এখন গণতন্ত্রের সুবাতাস, বিশ্বের অন্য অনেক দেশের সঙ্গে মিলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে দেশটি। কিন্তু বদলায়নি রোহিঙ্গাদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি। আগে যেমন নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া চলেছে, এখনো তাই। সু চি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেও রোহিঙ্গাদের পক্ষে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করেননি, ক্ষমতায় এসেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন যে দেশের ক্ষমতায়, সেই দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলছে, এটা অবিশ্বাস্য, এটা লজ্জার। দাবি উঠেছে অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার। এ দাবির সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করছি। তবে সু চির অবস্থানটা বুঝতে আমার কষ্ট হয় না। সাত/আট লাখ রোহিঙ্গার পাশে দাঁড়ালে যে গোটা দেশের জনমত তার বিপক্ষে চলে যেতে পারে। হারাতে পারেন, বহু কষ্টে পাওয়া ক্ষমতাও! সেই ঝুঁকিটাই তিনি নিতে চান না। এখানেই গণতন্ত্রের প্রচলিত ধারণার সঙ্গে আমার বিরোধ। গণতন্ত্রকামী সু চির কাছেও গণতন্ত্র মানে ন্যায্যতা নয়, গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, সংখ্যালঘুর ওপর নিষ্পেষণ।

সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর এ নিষ্পেষণ অবশ্য সব দেশেই সত্য। বাংলাদেশের নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর, গাইবান্ধায় সাঁওতালদের ওপরও চলছে সেই গায়ের জোরের শাসন। হায়, সংখ্যাগুরু হিসেবে যারা নিজেদের শক্তিশালী ভাবছেন, তারা সংখ্যাগুরুত্বের আপেক্ষিকতাটা বুঝতেই পারছেন না। নাফ নদের এপারে মুসলমান সংখ্যাগুরু, ওই পারে গেলেই কিন্তু সংখ্যালঘু। বিপদটা শুধু বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের নয়; গোটা বিশ্বেই নতুন করে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটছে। ভারতে, যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে, তুরস্কে, মিয়ানমারে সর্বত্রই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবিকতাকে সামনে রেখে যে নতুন বিশ্বের এগিয়ে চলা, তা যেন আবার পিছিয়ে যাচ্ছে। মানবিকতার জায়গা নিচ্ছে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ। নইলে যে বৌদ্ধ ধর্মের মূল চেতনাই হলো মানবতা, যারা জগতের সকল প্রাণীর সুখ চায়, সেই বৌদ্ধরাই কীভাবে রোহিঙ্গাদের কাছে সাক্ষাৎ আজরাইল হয়ে যায়? গৌতম বুদ্ধের অনুসারীদের কাছে এ প্রশ্নের কী জবাব। তবে আমি বিশ্বাস করি, মিয়ানমারে যা চলছে; তা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়, জাতিগত।

আসলে মানবাধিকার মানে মানুষের অধিকার। এখানে জাতি দিয়ে, ধর্ম দিয়ে, বর্ণ দিয়ে মানুষকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই।  গাইবান্ধায় ধান খেতে পড়ে থাকা মঙ্গল মাড্ডির লাশ আমাকে যতটা কাঁদায়, নাসিরনগরের ঘরহারা পূর্ণিমার আহাজারি আমাকে যতটা লজ্জিত করে, কাশ্মীরের বোরহানের মৃত্যু যতটা কষ্ট দেয়, তুরস্কের সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা আয়লানের মরদেহ যতটা আন্দোলিত করে, রামুতে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধ বিহার দেখে আমি যতটা বিচলিত হই; ঠিক ততটাই আমি বিধ্বস্ত হই কোনো রোহিঙ্গার ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে। রোহিঙ্গারা সংখ্যায় কম বলেই, তাদের কষ্ট তো কম নয়।  তারাও তো মানুষ।

লেখক : সাংবাদিক

[email protected]

সর্বশেষ খবর