ঢাকার আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার তৈরির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৬ শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার ঘটনা মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক। অগ্নিদগ্ধ শ্রমিকদের সবাই শিশু অথবা নারী। যাদের বয়স ১৪ থেকে ৪০ এবং এদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা গুরুতর। মঙ্গলবার বিকালের দিকে কারখানাটিতে আগুন লাগার সময় সেখানে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। তারা দ্রুত বের হওয়ার চেষ্টা করলেও ২৬ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার দুর্ভাগ্য এড়াতে পারেননি। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে ৯ শিশুও রয়েছে। তাদের শ্বাসনালিসহ শরীরের ১৬ থেকে ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সত্যিকার অর্থেই সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের জন্য মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। অগ্নিদগ্ধ শ্রমিকদের চিকিৎসা চালানোর খরচ কে জোগাবে তা নিয়ে তাদের স্বজনরা হতাশায় ভুগছেন। অগ্নিকাণ্ডে গোটা কারখানা পুড়ে যাওয়ায় জীবিকার সংকটেও ভুগছেন শ্রমিকরা। আমরা আশা করব কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ জন্য দায় কাদের সেটিও নির্ণয় করা হবে। পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধরা যাতে সুচিকিৎসা পায় এ বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার। এ ব্যাপারে কারখানা মালিক, সরকার এবং সমাজের অবস্থাপন্নদের এগিয়ে আসতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে যে সব শ্রমিক জীবিকা হারিয়েছে তাদের পাশেও সহমর্মিতার মনোভাব নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের দেশে শিল্প কলকারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা একটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসে পড়া এবং তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পর দেশের গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থা এখনো অনিরাপদ বয়ে গেছে। শিল্প মালিকদের অনুদারতার শিকার হচ্ছে সাধারণ শ্রমিকরা। বিশেষত গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৯ শিশুর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়টি মর্মান্তিক। যে বয়সে তাদের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে তারা অভাবের তাড়নায় নিজেদের শ্রম বিক্রি করছিল গ্যাস লাইটার কারখানার মতো ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। আইন অনুযায়ী শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো বেআইনি। বিষয়টি দেখার মতো কেউ না থাকায় ৯ শিশুকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হলো। আমরা আশা করব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার রোধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবে। এ ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধের সেটাই প্রকৃষ্ট উপায়।