শিরোনাম
রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত

বাংলাদেশের পাওনা অর্থ ফেরতদানে সুমতিও কাম্য

পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৩২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের ব্যাপারে সাড়ে চার দশক ধরে টালবাহানার আশ্রয় নিয়েছেন ইসলামাবাদের শাসকরা। এখন চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে গোয়েবলেসের এই বংশধররা উল্টো বাংলাদেশের কাছে তাদের ৭০০ কোটি টাকা পাওনা তত্ত্ব ফেরি করছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় সম্পদের সমবণ্টনের হিসাবে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪৩২ কোটি মার্কিন ডলারের অভিন্ন সম্পদের অর্ধেক ২১৬ কোটি মার্কিন ডলার। এর সঙ্গে আছে একাত্তরে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অঙ্কই বর্তমান হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর থেকে এ পাওনার বিষয়ে বারবার পাকিস্তানের কাছে উত্থাপন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হিসেবে বিরাজমান অমীমাংসিত আরও দুই ইস্যুর মীমাংসার বিষয়েও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও এ দেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে। ডলারের হিসাবে ১৯৭১ সালের নিরিখে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাওয়ার দাবি রাখে। তবে সে সময়ের ৪১৬ কোটি ডলারের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করলে এ অর্থের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকারও বেশি হওয়ার কথা। পাকিস্তান সার্কভুক্ত দেশ। এ দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় বাংলাদেশের আগ্রহেরও ঘাটতি নেই। কিন্তু বাংলাদেশকে তাদের প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত রাখা, একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করা এবং এ দেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে তাদের অনীহা সুসম্পর্কের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। নিজেদের অতীতের ভুল স্বীকার এবং কৃত অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাওয়া সভ্য জাতির পরিচয় বহন করে। জাপান ও জার্মানির মতো দাপুটে দেশের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নজির রয়েছে। কিন্তু অসভ্যতা ও বর্বরতাকে যারা নিজেদের ভূষণ হিসেবে বেছে নিয়েছে তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা হয়তো বাতুলতার শামিল। আমরা আশা করব সরকার পাকিস্তানের সুমতি ফিরিয়ে আনতে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসায় কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখবে। একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা এবং প্রাপ্য সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরকারকে আরও সোচ্চার হতে হবে।

সর্বশেষ খবর