শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাধক রাজনীতিক আবদুর রাজ্জাক

বাহালুল মজনুন চুন্নু

সাধক রাজনীতিক আবদুর রাজ্জাক

রাজ্জাক ভাই ছিলেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর। সারা জীবন লড়ে গেছেন অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। হেলাল হাফিজের কবিতার দুটি লাইনের সঙ্গে রাজ্জাক ভাইয়ের যৌবনকালের অদ্ভুতরকম মিল আছে। ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’— ঠিক এই লাইনটির মতোই রাজ্জাক ভাই নিজের যৌবনকালকে প্রথাগত চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ঘরসংসার করার জীবন বেছে নেননি।  তিনি বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দৃপ্ত শপথ লড়াইয়ে রক্তেভেজা রাজপথের, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের অনিশ্চিত এক জীবন। সুকান্ত ভট্টাচার্য তার আঠারো বছর বয়স কবিতায় বলেছিলেন, ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় উঁকি।’ রাজ্জাক ভাইয়ের বয়স যখন আঠারো, তখনই তিনি হয়ে উঠতে থাকেন রাজপথের এক লড়াকু সৈনিক, এক তুখোড় ছাত্রনেতা, যিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাঙালির স্বাধিকারের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলেন, উন্মুখ হয়েছিলেন দেশের তরে, দেশের মানুষের সামষ্টিক কল্যাণে নিজ জীবনকে বিসর্জন দিতে। তাই তো ষাটের দশকের আগ্নেয়গিরির লাভার মতো জ্বলন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে স্বাধিকার আন্দোলনগুলোতে তার ছিল সরব এবং তেজোদীপ্ত উপস্থিতি। যার ফলশ্রুতিতে শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে সহ্য করতে হয়েছে বছরের পর বছর কারাপ্রকোষ্ঠের অন্ধকারময় জীবন, ভোগ করতে হয়েছে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন-নিপীড়ন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তার এক বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে রাজপথ থেকে শুরু করে জেলজীবনে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে করতেই একসময় রাজ্জাক ভাইয়ের উত্তরণ ঘটে জাতীয় নেতা হিসেবে। বৃদ্ধি পায় তার কর্মপরিধি, ব্যস্ততা। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় ব্যক্তিগত জীবনচাহিদার ত্যাগের পরিধিও। রাজনীতির মাঠ কাঁপিয়ে, সারা দেশ চষে বেড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক সারা দেশের মানুষকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করাই ছিল যেন তখন জীবনের একমাত্র ব্রত। দীর্ঘ সংগ্রাম পরিক্রমার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যখন স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তিনি নিজ জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশমাতৃকার প্রতি প্রবল ভালোবাসা আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি তীব্র আবেগ তাকে রণক্ষেত্রে সবর্দা সাহস জুগিয়ে গিয়েছিল। মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ও রূপকার হয়ে দেরাদুনে কাজ করেছেন মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষক হয়ে, নিজেও লড়াই করেছেন সম্মুখসমরে। বাঙালি জাতির দীর্ঘ প্রতীক্ষিত, বহু ত্যাগ-তিতিক্ষাময় স্বাধীনতা অর্জন ও তত্পর চূড়ান্ত বিজয়ের পর থেকে রাজ্জাক ভাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ বাস্তবায়নে কাজ করে গিয়েছিলেন নিরলস। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন জাতির পিতার নির্দেশ পালন করে। পরবর্তীতে বাকশালের সম্পাদক হিসেবে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় দীর্ঘ আড়াই বছর তিনি কারাবন্দী থাকেন। দলের নেতা-কর্মীরা যখন দিশাহারা, সেই সময়টায় তিনি জেলে বসেই দলকে সংগঠিত করার জন্য, জাতির পিতার হত্যার বদলা নেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে দল পরিচালনা করতেন। পঁচাত্তর-পরবর্তী যে দুঃসময় গেছে, যে দুর্যোগ ঘটেছে জাতীয় জীবনে, সামরিক জান্তার শোষণ-নিপীড়নে ছাত্রলীগের কর্মীরা যখন অসহায়-দিশাহারা হয়ে পড়েছিল, তখন সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেটা করার জন্য কারাগার থেকে তিনি আমাদের যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিতেন সবসময়। তিনি তা করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দিতেন জেল থেকেই। পঁচাত্তর-পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারীরা নানা প্রচেষ্টা চালিয়েও তাকে তাদের অনুগত করতে পারেনি। শত নিপীড়নেও তিনি কাবু হননি, মাথা নত করেননি। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সামরিক স্বৈরাচারী সরকার দেশকে আবারও পাকিস্তানের করতলগত করার জন্য সংঘাত, সংক্ষুব্ধ, গুম, খুনসহ যে অরাজক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কূটকৌশল চালিয়েছিল, রাজ্জাক ভাই সর্বদাই ছিলেন এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তীব্র প্রতিবাদী এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক মহান ধারক। ছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী এক নেতা। নব্বই দশকের শুরুতে শহীদ-জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ব্যানারে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম এক সক্রিয় সৈনিক। তাদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা পদক্ষেপের কারণেই মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আজ দেশ কলঙ্কমুক্ত।

মনে পড়ে সেই দিনটির কথা, যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল তার সঙ্গে। আজ থেকে প্রায় আটচল্লিশ বছর আগের কথা। আমি তখন ছিলাম সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র। আর তিনি তখন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য। কেন্দ্রীয় নেতা এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ও কাছের মানুষ হিসেবে বলা চলে তখন তিনি দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক নেতা। ঢোলা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরা সাদাসিধে চালচলনের সেই নেতাকে দেখে আমি যারপরনাই বিস্মিত হয়েছিলাম। আমার কাছে বড় নেতা মানে মনে হতো জাঁকালো বেশভূষার কোনো একজন মানুষ। তাকে দেখেই সেদিন ভেঙে গেল আমার সেই ভ্রান্ত ধারণা। ওইদিন আমার কাছে তাকে মনে হয়েছিল একজন ঋদ্ধ সিদ্ধপুরুষ। আমাকে যখন রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় করে দেওয়া হলো তখন তিনি আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন পরম মমতায়। তার আবেগ-ভালোবাসা আমাকে মোহমুগ্ধ করে তুলেছিল। একজন সাধারণ কর্মীকে যিনি এত আপন করে বুকে টেনে নিতে পারেন, তিনি যে অনেক বড় মনের একজন নেতা, সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। এরপর তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই প্রমাণ পেতাম। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর এক বিশ্বস্ত যোদ্ধা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত এমনই একজন লড়াকু সৈনিক যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে দেশের আপামর জনসাধারণের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কাজ করে গেছেন। কখনই এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, এমনকি ব্যক্তিক জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রেও তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর এমন এক ভাবশিষ্যর সান্নিধ্য পেয়ে আমিও গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তাচেতনা, উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তার মাহাত্ম্য। বঙ্গবন্ধুর প্রতি রাজ্জাক ভাইয়ের কেমন ভালোবাসা তার একটি উদাহরণ না দিলেই নয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খান ও আরও অনেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সৃষ্টি করে। সিরাজুল আলম খান আর রাজ্জাক ভাই ছিলেন পরস্পরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, যেন হরিহর আত্মা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তারা দুজনে একসঙ্গে নিউক্লিয়াস নামের এক বিপ্লবী সংগঠনও করেছিলেন। সে যাই হোক, সিরাজুল আলম খানরা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু থেকে দূরে সরে গেলেও তিনি যাননি। তিনি আমাদের পরবর্তী সময়ে এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলতেন, পানি কাটলে যেমন দুই ভাগ করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেও আমাকে আলাদা করতে পারবে না। তিনি সবসময়ই বলতেন, আমি বঙ্গবন্ধুর একজন শিষ্য, এটাই আমার একমাত্র পরিচয়। বলিভিয়ার বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারা বলেছিলেন, একজন সত্যিকারের বিপ্লবী ভালোবাসার মহান অনুভূতির শক্তিতে পথ চলেন। রাজ্জাক ভাই ঠিক এমনই একজন বিপ্লবী যিনি বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগকে অনির্বাণ ভালোবেসে গেছেন আজীবন।

কর্মীদের প্রতি রাজ্জাক ভাইয়ের ছিল অপরিসীম ভালোবাসা-দায়িত্ববোধ। কর্মীপ্রাণ এমন নেতা খুঁজে পাওয়া ভার। কোনো কর্মী বিপদে পড়লে তিনি ছুটে আসতেন সর্বাগ্রে। আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো কর্মী যদি গ্রেফতার হতো তাহলে তার মুক্তির জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সবকিছুই করতেন তিনি। জেলে থাকা অবস্থায় কর্মীরা যেন দুঃসহ কষ্ট ভোগ না করে সেদিকেও ছিল তার নজর। তার চিন্তাচেতনায় কর্মীদের মঙ্গল কামনা ছিল সর্বদা বিরাজমান। ঠাকুরগাঁওয়ে জিতেন্দ্রনাথ নামের এক কর্মীকে গলা কেটে হত্যা করেছিল বিএনপির কর্মীরা, তখন রাজ্জাক ভাই শোকে মূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন। তার চোখের অশ্রু আর বিমর্ষ চেহারাই বলে দিচ্ছিল, একজন কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনায় তিনি কতটা ব্যথিত, কতটা মুষড়ে পড়েছিলেন। তিনি আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ওই কর্মীর পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য।

রাজ্জাক ভাইয়ের রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। ষাটের দশকের শুরুর দিকে তিনি ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করে দুবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাই ছাত্রলীগের প্রতি ছিল তার তীব্র আবেগ। যদি কোনো কারণে ছাত্রলীগের মধ্যে কোনো অন্তর্কলহ দেখা দিত, তবে তিনি মুষড়ে পড়তেন। তার প্রাণের ছাত্রলীগের মাঝে কোনো কলহ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। অনেক সময় নিজেই অন্তর্কলহ মিটিয়ে দিতেন, আবার অনেক সময় তোফায়েল ভাইয়ের ওপর মেটানোর ভার দিতেন। এখানে একটা কথা না বললেই নয়, তোফায়েল ভাইয়ের প্রতি তার ছিল প্রচণ্ড আবেগ-ভালোবাসা ঠিক যেমন আপন ভাইয়ের প্রতি থাকে। নানান সময়ে তাদের মধ্যে নানান বিষয়ে মতদ্বৈততা থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময়ই ছিল অটুট। তারা দুজনে ছিলেন মানিকজোড়, বঙ্গবন্ধুর দুই বিশ্বস্ত নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক। আমরা তাদের মানিকজোড়ই বলতাম। সে যাই হোক, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তিনি তোফায়েল ভাইয়ের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার জন্য সবসময় বলতেন। আর নিজেও ছাত্রলীগের কর্মীদের আদর্শিক পথে চলতে সবসময় উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি আমাদের দেশের প্রতি, দলের প্রতি, কর্মীদের প্রতি ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত তা ব্যাখ্যা করতেন। দলীয় কর্মীদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত এ নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছিলেন একসময়। রাজ্জাক ভাই ছিলেন দলের নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস ও আস্থার কেন্দ্রস্থল। সেই বিশ্বাস ও আস্থা ছড়িয়ে পড়েছিল আপামর জনসাধারণের মাঝে। কর্মনিষ্ঠা, কর্মকুশলতা এবং আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে নিরলস শ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা ধারণকারী জনকল্যাণকামী একজন নেতা হিসেবে। এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নির্লোভ, সৎ, ত্যাগী, সাহসী, স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী এমন একজন সফল রাজনীতিক যার চেতনায় সবর্দাই বিরাজ করত দেশ ও সমাজের কল্যাণ। আদর্শবাদ, সততা ও মানবতার ধারা বজায় রেখে সমগ্র জীবন পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যুর সংবাদে তীব্র শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তার অসংখ্য নেতা-কর্মী, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী।  শোকে মুহ্যমান আমার মতো হয়তো তাদের হৃদয়েও ধ্বনিত হচ্ছিল শামসুর রাহমানের ‘এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়?’ কবিতার এই কয়েকটি লাইন, এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়?/ তেমন যোগ্য সমাধি কই?/ মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো/ অথবা সুনীল-সাগর-জল-/ সবকিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই!/ তাইতো রাখি না এ লাশ আজ/ মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,/ হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।

লেখক : সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

সর্বশেষ খবর