আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলবেন— ‘মাথা উত্তোলন করুন এবং যা চাওয়ার চান, সব দেওয়া হবে।’ যদি না দিতেন, তাহলে চাইতে বলতেন না। কিয়ামতের দিন সব মানুষ বিচলিত হয়ে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করবে আর নাফসি নাফসি বলে পেরেশান হয়ে নবীদের কাছে সুপারিশ করার আবেদন করবে। আদম (আ.)-এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, আমার দ্বারা সম্ভব নয় আল্লাহপাক জান্নাতে ফল খেতে নিষেধ করলে আমি তা মানতে পারিনি। ওই ফল ভক্ষণ করেছি। ফলে বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছে। আমার জানা নেই আজ কী ব্যবহার করা হয় আমার সঙ্গে। এরপর হজরত মূসা (আ.)-এর কাছে পাঠানো হলে তিনি বলবেন, আমি সুপারিশ করতে পারব না, কারণ আমি কিবতি একজনকে থাপ্পড় দিয়ে হত্যা করেছিলাম। জানি না আজ আমার সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করা হয়। এভাবে তারা হজরত নূহ ও ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে পৌঁছবে, তারাও নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেন, তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তার কাছে আবেদন করার পর তিনি সেজদায় পড়ে কাঁদতে থাকবেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, হে আল্লাহ! সমস্ত মানুষ বিচলিত, সবাই মহাবিপদে আছে। আপনি বিচার কায়েম করুন, জান্নাত ও জাহান্নামের সিদ্ধান্ত করুন। এরপর আল্লাহপাক মিজান তথা দাঁড়িপাল্লা কায়েম করবেন এবং মানুষের হিসাব নেওয়া আরম্ভ করবেন। এটাকে বলা হয় শাফায়েতে কুবরা। সেদিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সামনে বলেন, সেদিন মানুষ বিচলিত হয়ে ঘুরতে থাকবে উলঙ্গ অবস্থায়। উলঙ্গ অবস্থার কথা বললে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসুল একজন অপরজনকে দেখবে না? এ প্রশ্ন শুনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, হে আয়েশা! সেদিন সম্পর্কে তুমি আঁচ করতে পারনি। সেদিন সবার দৃষ্টি উপরের দিকে থাকবে। কেউ কারও দিকে তাকাবে না, নিজের চিন্তায় সবাই বিভোর থাকবে।
হিসাব-নিকাশের পর জান্নাতিগণ জান্নাতে আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনেক উম্মতে মুহাম্মাদি জাহান্নামে যাবে। তা দেখে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যথিত হয়ে সেজদায় পড়ে যাবেন। আল্লাহপাক বলবেন, মাথা উত্তোলন করে যা চাওয়ার চান, দেওয়া হবে। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতির আবেদন করবেন। আল্লাহপাক বলবেন, আজ আপনার পেরেশানির দিন নয়। আপনি যা চাইবেন, তাই দেওয়া হবে। দুনিয়াতে অনেক কষ্ট করেছেন, আজ কষ্টের দিন নয়। আপনার ইচ্ছামতো জাহান্নামিদের বের করুন। আল্লাহপাক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাপক অনুমতি দেবেন। শুধু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে বের করতে না বলে নির্দেশটি ব্যাপক রাখাতে তিনি অন্য উম্মতদেরও বের করবেন। এরপরও অনেক উম্মত বাকি থাকবে। হাজার হাজার বছর পর আল্লাহপাক বলবেন, আপনার সমস্ত উম্মতকে বের করে এনেছেন কি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। আল্লাহপাক বলবেন, আরও অনেকে আছে নিয়ে আসুন।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।