দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে দেশের দুটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে এনবিআর আয়োজিত ‘জাতীয় শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা’ শীর্ষক সেমিনারে দুদক ও এনবিআরের পক্ষ থেকে সাফ সাফ বলে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতিবাজ কাউকে তারা ছাড় দেবেন না। দুদক চেয়ারম্যান সেমিনারে আত্মসমালোচনা করে বলেছেন, ব্যক্তিগত ও পদ্ধতিগত কারণে এনবিআর-দুদক সম্পর্কে ধারণা ইতিবাচক নয়। এ বিষয়ে নিজেদের সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, সময় এসেছে কাউকে ছাড় না দেওয়ার। অবৈধ আয় যাতে কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে তিনি এনবিআরের সহযোগিতা চেয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান সেমিনারে বলেছেন, সব ধরনের দুর্নীতি, হয়রানি, অসদাচরণ ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে। এ জন্য কমিশনার পর্যায়ের এক কর্মকর্তার পদবনতি করা হয়েছে। এনবিআর আয়োজিত সেমিনারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক ও এনবিআরের প্রত্যয়দীপ্ত ঘোষণা সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। দুর্নীতি এ মুহূর্তে একটি জাতীয় সমস্যা। দেশবাসী সরকারি দফতরগুলোর প্রাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ আপদের কারণে। দেশের মানুষের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ কাঙ্ক্ষিত সুফল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশকে বলা হয় কর ফাঁকির মৃগয়া ক্ষেত্র। দেশের অন্তত ৫০ লাখ মানুষ করের আওতায় আসার সামর্থ্যধারী হলেও মোট করদাতার সংখ্যা এর ৭/৮ ভাগের একভাগ মাত্র। যারা কর দেন তাদের অনেকেই কর দানের ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকিকে অনুকরণীয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলে জনকল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে সরকারের পক্ষে পর্যাপ্ত অর্থ সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। হয়রানির ভয়ে অনেকেই যে এ দেশে কর দেওয়ার পথে পা বাড়ায় না তা একটি পরীক্ষিত সত্য। আশার কথা কর আদায়ে গতি সৃষ্টি করতে এনবিআর সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। নিজেদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য দুদকের মধ্যেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে যে বিষয়টি প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। আমরা আশা করব ভাবমূর্তি উন্নয়নের এ প্রচেষ্টা দেশের সামগ্রিক চালচিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তনে অবদান রাখতেও সক্ষম হবে।