বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীর টেঁটাযুদ্ধ

এ লজ্জা ঝেড়ে ফেলতে হবে

রাজধানী লাগোয়া জনপদ নরসিংদীতে সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল কয়েক হাজার বছর আগে। নরসিংদীতে আবিষ্কৃত ওয়ারী বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রমাণ করে হাজার হাজার বছর আগেও এই জনপদে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। মধ্যযুগেও নরসিংদী মসলিন উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। এখনো এ জেলার গুরুত্ব দেশের বস্ত্রশিল্পের ‘রাজধানী’ হিসেবে। নরসিংদীতে জন্মগ্রহণ করেছেন দেশসেরা কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক ও গুণীজনরা। মুক্তিযুদ্ধে দেশের যেসব এলাকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তার সামনের কাতারে রয়েছে এ জেলার নাম। কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত এ জেলার ঐতিহ্য ও সুনামের মুখে চুনকালি লাগাচ্ছে টেঁটাযুদ্ধের জনপদ হিসেবে নরসিংদীর পরিচিতি। জেলার চরাঞ্চলে টেঁটাযুদ্ধের নামে বছরের পর বছর ধরে যে নৃশংসতার চর্চা চলছে তা আইয়ামে জাহেলিয়াকেও হার মানায়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই বেধে যায় সংঘর্ষ। এলাকায় এলাকায় পূর্ব ঘোষণা দিয়ে টেঁটা-বল্লম-দা-ঢাল নিয়ে মরণযুুদ্ধে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এসব সংঘর্ষে যোগ দিতে আশপাশের ২০-২৫ গ্রাম থেকেও স্ব-স্ব পক্ষের লোকজন এসে হাজির হয়। কখনো কখনো পরপর দুই-তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই মরণখেলা বন্ধে পদক্ষেপ নেন না। প্রতিপক্ষের হামলা-মামলায় সর্বস্ব হারায় শত শত পরিবার। তবু তারা সর্বনাশা টেঁটাযুদ্ধ থেকে সরে দাঁডায় না। যারা নিহত হন, তাদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে পাল্টা খুন আর মামলা চলে। সংঘর্ষ অনেকটা যেন স্থানীয়দের নেশায় পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো চরের ৯৫ ভাগ পরিবারই টেঁটাযুদ্ধে জড়িত। এই মরণখেলায় শুধু পুরুষই নয়; শিশু ও নারীরাও থাকেন সম্মুখ সারিতে। প্রাচীন সভ্যতার জনপদ নরসিংদীর একাংশের এহেন চিত্র লজ্জা ও অপমানের।  এ লজ্জা ঝেড়ে ফেলতে একদিকে যেমন জেলার সব বিবেকবান মানুষকে সক্রিয় হতে হবে তেমন সরকারকেও শক্ত হাতে চরাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর