বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাউকে উপহাস করা ঘোরতর অন্যায়

মাওলানা মুহম্মাদ আশরাফ আলী

কাউকে অবজ্ঞা কিংবা উপহাস করা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘোরতর অন্যায়। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে এ ধরনের অপকর্মের পরিণাম সম্পর্কে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে— ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের একদল অন্য দলকে যেন উপহাস না করে, কেননা হতে পারে (আল্লাহর কাছে) উপহাসকৃত দল উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম। অনুরূপ কোনো মহিলা যেন অপর মহিলাকে উপহাস না করে, কেননা হতে পারে উপহাসকৃত মহিলা উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম।’

হজরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ তকি ওসমানি পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তাসখীর’-এর অর্থ কারও অপমান ও তাচ্ছিল্য করা। এমনভাবে কারও দোষ বর্ণনা করা, যাতে মানুষ তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে, এতে ওই ব্যক্তির অন্তরে ব্যথা আসে। এ ধরনের কাজ অনেক রকম হতে পারে। যেমন— কারও চলাফেরা, ওঠাবসা, কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি নিয়ে ব্যঙ্গ করা, কারও শারীরিক গঠন ও আকার-আকৃতি নিয়ে কটূক্তি করা, তার কোনো কথা বা কাজের ব্যাপারে ঠাট্টা করা। চোখ, হাত-পা দ্বারা টিকা-টিপ্পনী মারা ইত্যাদি জিনিস অন্তর্ভুক্ত।

কাউকে অবজ্ঞা ও উপহাস করার ঘটনা এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের সুসম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টি করে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। এগুলো হলো জাগতিক বিষয়। আখিরাতের জীবনেও এ জন্য কঠিন পরিণাম ভোগ করতে হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ায় যারা কাউকে উপহাস করে তাদের জন্য আখিরাতে জান্নাতের দরজা খোলা হবে এবং তাদের জান্নাতের দিকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা যখন কাছে এসে জান্নাতের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে উদ্যত হবে তখনই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবে বারবার তাদের ডাকা হবে এবং প্রবেশ করতে গেলেই তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক পর্যায়ে এভাবে করতে করতে সে নিরাশ হয়ে আর জান্নাতের দিকে ফিরে যাবে না। এভাবে দুনিয়ায় তার উপহাসের পরিণামে আখিরাতে তাকে নিয়ে এ ধরনের উপহাস করা হবে।

দুনিয়ার জীবনে এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে চাইলে এবং আখিরাতের জীবনে কঠিন সাজা থেকে রেহাই পেতে হলে কাউকে অবজ্ঞা ও উপহাস করার অপগুণ থেকে দূরে থাকতে হবে। কোনো মুমিনের কথা ও কাজে অন্য কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সদাচরণ হলো আল্লাহর এক বান্দার প্রতি অন্য বান্দার হক। আল্লাহ যেহেতু মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীবের মর্যাদা দিয়েছেন, সেহেতু কোনো মানুষকে অবজ্ঞা ও উপহাস করা স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করার নামান্তর। আল্লাহ আমাদের সর্বাবস্থায় এই অন্যায় থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর