শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘুষ একটি অভিশাপের নাম

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ঘুষ একটি অভিশাপের নাম

সাধারণ মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ও দেশকে পেছনে ফেলে দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি। আমরা যতদিন এর শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারব না, ততদিন আমাদের এর কুফল ভোগ করতেই হবে। নীতি ও নৈতিকতার পাখায় ভর করে (ইমানের সঙ্গে) দুনিয়ার হায়াতকে পাড়ি না দিতে পারলে, অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদের চাপে আমাদের জাহান্নামের অতল গর্ভে নিপতিত হতে হবে। পবিত্র কোরআনে এ জাতীয় কাজের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কর না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে এমন কোনো মামলা কর না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৮)। দুর্নীতির অনেক শাখা রয়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে ঘুষ। ‘আল্লাহতায়ালা ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেছেন। (আবু দাউদ : ৩৫৮০) কারও ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে কিছু দেওয়াকে ঘুষ বলা হয়। কখনো আবার কোনো মধ্যস্থতাকারীকে ব্যবহার করে চুক্তির মাধ্যমেও নেওয়া হয়। কেউ আবার এটিকে নিজের অধিকার ভেবে সরাসরি চেয়েও বসেন। পার্থক্য হলো, কারও চাওয়ার ধরন ভিক্ষুকের মতো হয়, আবার কেউ গুণ্ডা-মাস্তানদের মতো মানুষকে জিম্মি করেও তা আদায় করে থাকেন। কেউ আবার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের গুণগান গাওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ নিয়ে থাকেন। কেউ কেউ পরিচিত মুখ দেখলে ঘুষ চাইতে পারেন না, তাই ওই বেচারার কাজও শেষ পর্যন্ত হয় না। এসব পরিস্থিতির মূলে থাকে কিছু হারাম অর্থ। অথচ রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।’ (মু’জামুল আউসাত : ২০২৬) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য দোজখের আগুনই উত্তম।’ (তিরমিজি : ৬১৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায় সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আগমন করবে যে, তার মুখমণ্ডলে এক টুকরো গোশতও থাকবে না।’ (সহিহ বুখারি : ১৪৭৪) এ হাদিসটি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্য যেমন প্রযোজ্য তেমনি দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দিষ্ট বেতন পাওয়ার পরও মানুষের কাছে ঘুষের আবদারকারীদের জন্যও প্রযোজ্য। এ ধরনের হারাম ভক্ষণের ফলে দিন দিন মানুষের ইমান আমল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানুষের ইবাদত, দোয়া কবুল হয় না। পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে— ‘একবার রসুল (সা.)-এর কাছে একটি আয়াত তেলাওয়াত করা হলো, ‘হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর।’ তখন সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়। রসুল (সা.) বললেন : হে সাআদ, তোমার পানাহারকে হালাল কর, তবেই তোমার দোয়া কবুল হবে। (আল মু’জামুল আউসাত : ৬৪৯৫)

     লেখক : প্রাবন্ধিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর