একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকেও সহিংসতা ও বাল্যবিয়ের দুর্বিপাকে ভুগছে বাংলাদেশের নারী। সরকার ও রাজনীতির শীর্ষ পদে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দৃশ্যত নারী নেতৃত্বের আধিপত্য বিরাজ করলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নোখর নিয়ন্ত্রণে তা খুব একটা ভূমিকা পালন করতে পারেনি। দুনিয়ার যেসব দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি পারিবারিক সহিংসতার শিকার, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বাল্যবিয়ের নিন্দনীয় ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না পদ্মা মেঘনা যমুনা বুড়িগঙ্গা তীরের মানুষ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে সহিংসতা ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে বোদ্ধাজনদের বক্তব্যে। নারী অধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান সরকারের জন্য এ দুই আপদকে রোধ করা যে বড় একটি চ্যালেঞ্জ তাও স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেছেন তারা। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শত শত বছরের পশ্চাত্পদতার শিকার বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে নিতে হলে সাংবিধানিকভাবে সমধিকারের স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে সামনে এগোনোর স্বার্থে অগ্রাধিকারের সুযোগ দিতে হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এনে নারীর প্রতি সহিংসতার ইতি ঘটাতে হবে। বাল্যবিয়ের জংলি যুগ থেকে বেরিয়ে আসার সক্ষমতা দেখাতে হবে সরকারকে। বাল্যবিয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যযুগের গণ্ডিতে আবদ্ধ তালেবান উপদ্রুত দেশ আফগানিস্তানের চেয়েও যে খারাপ সন্দেহ নেই। বাবা-মা বখাটেদের ভয়ে তাদের কন্যাসন্তানকে বাল্য বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। নারী শিক্ষার জন্যও বাধা বখাটে নামের নোংরা শকুনেরা। রাজনীতির শীর্ষ পদে উত্তরাধিকারিত্বের জোরে দুই যুগের বেশি সময় ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতার পদটিতে নারীরা থাকলেও জাতীয় রাজনীতিতে নারীর পদচারণা এখনো যৎসামান্য। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ অর্থ আসে নারী শ্রমিকদের শ্রমের ফসল তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু তারপরও নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন আমাদের দেশে প্রশ্নবিদ্ধ পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে। এ অবস্থার উত্তরণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে হবে। নিপীড়কদের ইন্ধন জোগায় যে কূপমণ্ডূকতা তা থেকেও বেরিয়ে আসার সক্ষমতা অর্জনও সময়ের দাবি।