বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

হিংসার পরিণাম

হাফেজ কারি মাও. মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

হিংসার পরিণাম

অন্যের ভালো দেখে সহ্য করতে না পারা, অন্যের ভালো দেখে নিজের মধ্যে কষ্ট অনুভব হওয়া। সেই ভালো ধ্বংসের জন্য কামনা ও প্রচেষ্টা শুরু করে দেওয়াকে সাধারণত হিংসা বলা হয়।  হিংসা কবিরা গুনাহ, হিংসা ভালো অর্জনগুলো এমনভাবে নিঃশেষ করে দেয় যেভাবে আগুন কাঠকে পুড়িয়ে দেয়। হিংসুক সর্বদা পেরেশানির মধ্যে থাকে। একনিষ্ঠতার সঙ্গে কোনো কাজ করতে পারে না। আল্লামা গাজ্জালী (রহ.) হিংসার সাতটি কারণ উল্লেখ করেছেন : ১. শত্রুতা  ২. নিজের ওপর অন্য কেউ সম্মানিত হয়ে যাওয়া ৩. অহংকার ৪. অস্বাভাবিকভাবে কেউ এগিয়ে যাওয়া। ৫. নিজের পদ বা মর্যাদা হারিয়ে যাওয়ার ভয় করা। ৬. নেতৃত্ব ও সম্মানের লোভ ৭. নিচু বা খারাপ মানসিকতা। হিংসুকের আলামত : ১. অন্যের ভালো অবস্থা দেখে তাকে শত্রু ভাবা। ২. তার প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া। ৩. অন্যের কল্যাণের কারণে সব সময় অন্তরে এক ধরনের কষ্ট ও ব্যথা অনুভব করা। ৪. যার প্রতি হিংসা করে তার কাছ থেকে নিয়ামত চলে গেলে আনন্দিত হওয়া যদিও এতে তার কোনো লাভ বা ক্ষতি না থাকা। ৫. সব সময় এ ব্যাপারে সতর্ক ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে যেন কোনোভাবেই চলে যাওয়া সেই নিয়ামত আর ফিরে না আসে।  হিংসুককে চেনার জন্য লোকমান হাকিম স্বীয় পুত্রকে তিনটি লক্ষণ বলেছেন, ১. পেছনে গিবত করে ২. সামনাসামনি তোষামোদি করে। ৩. বিপদে পড়লে তিরস্কার করে। শিক্ষণীয় ঘটনা : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রসুল (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। রসুল (সা.) একটি গলির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই গলি দিয়ে এখন একজন জান্নাতি লোক বেরিয়ে আসবে। অতঃপর দেখলাম সেদিক দিয়ে এক আনসারি সাহাবি তার নাম সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) তিনি বের হয়ে এলেন। তার দাড়ি থেকে তখন অজুর পানি গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি সবাইকে সালাম দিলেন, অন্য আরেক দিনও রসুল (সা.) এভাবে বললেন এবং সেই লোকটিই বেরিয়ে এলেন। এভাবে তিন দিন এমন হলো। তৃতীয় দিন রসুল (সা.) মজলিস থেকে উঠে যাওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) ওই সাহাবিকে অনুসরণ করলেন, আমার পিতার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে এ কারণে বাড়িতে যাব না বলে শপথ নিয়েছি। যদি আপনি ভালো মনে করেন, আমাকে আপনার সঙ্গে তিন দিন থাকতে অনুমতি দিন। তিনি রাজি হলেন, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি তার সঙ্গে তিন দিন থাকলাম। তাকে এমন বিশেষ কোনো আমল করতে দেখিনি। তবে যখনই তার ঘুম ভাঙত তিনি জিকির করতেন। আর একটি হলো আমি তাকে ভালোটি ছাড়া কোনো মন্দ কাজ করতে দেখিনি। তিন দিন পর আমি তাকে সব খুলে বললাম এবং জানতে চাইলাম আপনার কাছে তো এমন কোনো বিশেষ আমল পেলাম না যার কারণে আপনি জান্নাতের এমন সুসংবাদ পেতে পারেন।  তখনই ওই সাহাবি বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন আমার বিশেষ কোনো আমল নেই তবে আমি কখনো আমার অন্তরে কারও ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ অনুভব করি না। তখন আবদুল্লাহ (রা.) বললেন হ্যাঁ, এই আমলই আপনাকে ওই মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে।  (মুসনাদে আহমাদ)

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ওলি মার্কেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর