দেশের হাজার বছরের ইতিহাসে বর্তমান সরকারের গত আট বছরকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুবর্ণ সময় হিসেবে অভিহিত করা যায়। গত আট বছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে রেকর্ড পরিমাণ নিয়োগের ঘটনাও ঘটেছে। সরকারের এ দুটি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তাদের শিরস্ত্রাণে সাফল্যের সোনালি পালক সংযোজন করলেও মানুষের মন জয়ে কতটুকু সক্ষম হয়েছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বিশেষত সরকারি প্রতিষ্ঠানে উেকাচ নামের যে নিয়োগ বাণিজ্য চলছে তা সরকারের সব সুকৃতিকে গিলে খাবার হুমকি সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি দেশের প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। এসব স্কুলের এক লাখেরও বেশি শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণের আওতায় আনা হয়। এ জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গঠন করা হয়েছিল যাচাই-বাছাই কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ এলাকায় চাকরি সরকারিকরণের সুবিধা দেওয়া হয়েছে উেকাচের বিনিময়ে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু শিক্ষক নিয়োগই নয়, প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের দফতরি, পিয়ন, ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে সব নিয়োগে লাখ লাখ টাকার ‘ঘুষ বাণিজ্য’ হচ্ছে। পুলিশ কনস্টেবল ও এএসআই নিয়োগেও দরদাম হাঁকানো হওয়ার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। টাকার বিনিময়ে সব সময় যে সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের চাকরি দেওয়া হয় তাও নয়। এ ক্ষেত্রে নিয়োগদাতারা এতটাই উদার যে চাকরি প্রার্থীর পরিচয় নিয়ে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। যে কারণে বিরোধী দলের সমর্থকরাও উেকাচের বিনিময়ে চাকরি নিচ্ছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সিন্ডিকেট এ অনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। কর্মীদের মতে, প্রভাবশালীরা টাকার বিনিময়ে সরকারবিরোধীদেরও নিয়োগ দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের। নিয়োগ বাণিজ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দলের সুবিধাবাদী একটি ক্ষুদ্র অংশ জড়িত থাকলেও বদনাম ভোগ করতে হচ্ছে সরকার ও সরকারি দলের সংশ্লিষ্ট সবাইকে। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই নিয়োগ বাণিজ্যের অপখেলা বন্ধে সরকার উদ্যোগ নেবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।