সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

রক্তস্নাত পয়লা মে

শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক সময়ের দাবি

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার শপথ নেওয়ার দিন পয়লা মে। শ্রমিকশ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি ও সংগ্রামের ঐতিহ্যে মহিমামণ্ডিত এ দিনটি। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ১৮৮৬ সালের পয়লা মে বুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। মালিকপক্ষ ন্যায্য মজুরি ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সীমা মেনে নিতে বাধ্য হয়। পয়লা মে’র পথ ধরে স্বীকৃত হয় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শিল্পক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক দরকষাকষি বৈধতা পায়। ১৮৮৬ সালের রক্তক্ষরণের এ দিনটি দুনিয়ার দেশে দেশে শ্রমিক সংহতির দিন হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। বুলেটবিদ্ধ শ্রমিকদের রক্তেভেজা শার্ট আন্দোলন-সংগ্রামের লাল পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে শ্রমজীবী মানুষের কাছে। ১৩১ বছর আগে শিকাগো শহরে মালিকপক্ষের নৃশংসতার শিকার শ্রমিকরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেন শ্রমজীবী মানুষের শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। মহান মে দিবসের পথ ধরে পরবর্তীতে সংঘটিত হয় রুশ বিপ্লব। চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিকশ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। মে দিবস বিশ্বজুড়ে সমাজবাদী চেতনারও বিকাশ ঘটায়। পুঁজিবাদের মানবিক বিকাশেও মে দিবসের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কিংবা তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ যে সম্ভব নয় এটি এখন ধনবাদীরাও স্বীকার করেন। নারীমুক্তির ক্ষেত্রেও মে দিবসের চেতনা অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে পুঁজির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। পোশাক শিল্পে স্পুটনিক গতিতে এগিয়েছে আমাদের দেশ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে চল্লিশ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য। যাদের অধিকাংশই নারী। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। যাদের সিংহভাগই বিদেশ বিভূঁইয়ে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। দেশের অর্থনীতির বিকাশে যারা অনন্য অবদান রাখছেন তাদের মর্যাদা আমাদের সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ। শ্রমিকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একাংশের মধ্যেও রয়েছে অনুদারতার মনোভাব। দেশের অগ্রগতির স্বার্থে উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সুষ্ঠু সম্পর্কের প্রয়োজন। এ সুষ্ঠু সম্পর্কের মধ্যেই শিল্পব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ নিহিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর