শনিবার, ৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

শাবান মাস ও শবেবরাত

মুফতি এহসানুল হক জিলানী
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সকল প্রশংসা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবিদের প্রতি। চলমান মাস শাবান। এর পরে প্রতীক্ষিত ও কাঙ্ক্ষিত রমজান মাস। এর আগের মাস ছিল রজব। রজবে প্রিয়নবী (সা.) বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের বরকত দিন রজব মাসে এবং শাবান মাসে এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত চলমান রাখুন।’ প্রিয়নবী (সা.)-এর এই সুন্নতের অনুসরণে আলহামদুলিল্লাহ আমরাও তা পাঠ করেছি।

এখন শাবান মাস চলছে। শাবান একটি মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতের মাস। প্রচুর সওয়াব সংগ্রহ এবং মাহে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার মাস। শাবান শব্দের অর্থ ‘বহু শাখাবিশিষ্ট’। অর্থাৎ এ মাসের একটি নেক আমলে বহুগুণে সওয়াব পাওয়া যায়। শাবান রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। এ মাসে দেহ-মনে এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত।

উম্মতের শিক্ষা এবং মহান আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) একবার বললেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আপনি শাবান মাসে যত বেশি রোজা রাখেন অন্য কোনো মাসে তো তেমন বেশি রোজা রাখতে আপনাকে দেখি না। বিষয়টি কেমন?’ জবাবে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি একটি বরকতময় মাস, এ মাসে বিশেষ মর্যাদায় বান্দার আমল মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছানো হয়, আমি এটা পছন্দ করি যে, আমি রোজা রেখেছি, অন্যান্য আমলের সঙ্গে এই আমলটিও আল্লাহর কাছে পৌঁছানো হোক।’

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, শাবান মাসের আগমন ঘটলে সাহাবি (রা.)-রা কোরআন মাজিদের ওপর ঝুঁকে পড়তেন এবং অধিকহারে তা পাঠ করতেন। তাঁরা এ মাসে তাদের জাকাতগুলোও বণ্টন করে দিতেন, যাতে গরিব-মিসকিন ও দুস্থ মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে রমজানের রোজার প্রস্তুতি নিতে পারে।

রসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশনা দিয়েছেন শাবান মাস থেকে প্রস্তুতি নিতে রমজানের জন্য। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা শাবান মাসে রোজা রেখে রমজানের রোজার জন্য প্রস্তুতি নেবে। যে ব্যক্তি শাবান মাসে তিনটি রোজা রাখবে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

শাবানের ১৫তম রাত হলো শবেবরাত তথা মুক্তির রজনী অথবা ভাগ্যরজনী। পরবর্তী এক বছরের মোটামুটি বাজেট এ রাতেই নির্ধারিত হয়।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেছিলেন, হে আয়েশা! এ রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যম তথা ১৫তম রাতে কী কী ঘটনা ঘটে তা কি তুমি জানো? আয়েশা (রা.) বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এ রাতে কী কী ঘটে? জবাবে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পরবর্তী এক বছর কোন কোন মানুষের জন্ম হবে তা এ রাতে নির্ধারণ করা হয়, এক বছরে কার কার মৃত্যু হবে তাও এ রাতে নির্ধারণ করা হয়, এ রাতে মানুষের আমলগুলো বিশেষ মর্যাদায় মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছানো হয় এবং এ রাতে তাদের রিজিক নাজিল করা হয়। (বায়হাকি, মিশকাত পৃ. ১১৫)।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাবানের মধ্যম রাতটি উপস্থিত হলে তোমরা সবাই এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সে রাতে সূর্যাস্তের সময় কুদরতিভাবে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। রিজিক জীবিকা চাওয়ার কেউ আছো কি? আমি তার জন্য রিজিক মঞ্জুর করে দেব। বিপদগ্রস্ত কেউ আছো কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেব। এমন এমন সমস্যা সংকটে কেউ আছো কি? সুবহে সাদিক পর্যন্ত মহান আল্লাহ এভাবে বলতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১১৫)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) শাবানের ১৫তম রাতে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করেছেন এবং দোয়া করেছেন। সে রাতে তিনি হজরত আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন, শাবানের মধ্যম রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের যত বকরি এবং সেগুলোর যত পশম তার চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১১৫)।

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রসুলুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ১৫তম শাবানের রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং তার সব সৃষ্টিজগেক ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিককে নয় এবং কৃপণকে নয়, খুনিকে নয়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১১৫)।

আসুন আমরা এ মাসে এবং বিশেষভাবে শাবানের ১৫তম রাতে সওয়াবের নিয়তে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। খুনাখুনি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করি এবং নিজের পরিবার, সমাজ ও জাতির সবার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনায় দোয়া-মোনাজাত করি। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর