শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

সৌজন্য ও শিষ্টাচার

শফিকুল ইসলাম শফিক

সৌজন্য ও শিষ্টাচার

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী, হিকমতের আধার, রহমতে আলম, উম্মতের কাণ্ডারী, খোদায়ী আদর্শের পূর্ণতম বিকাশ ঘটেছিল আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাঝে। যার আদর্শ ‘শ্রেষ্ঠ উসওয়া’ পৃথিবীর প্রতিটি মানবের হৃদয়কে তার অজান্তেই কেড়ে নিয়েছে। যার পদতলে সব মাখলুক, যার অনুসৃত পথ ধরে চললে প্রতিটি মানুষের জীবনে আসতে পারে এক বেহেশতি শান্তি, যার দ্বিতীয়টি পৃথিবীর আর কেউ আনয়ন করতে পারেনি, আর ভবিষ্যতেও পারবে না, যার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবনের সর্বস্তরে বিদ্যমান রয়েছে উম্মতের নিমিত্ত অপ্রতিম আদর্শ। যার সম্পর্কে পবিত্র কোরআন তার অলঙ্কারপূর্ণ ভাষায় দ্ব্যর্থ কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছে, ‘নিশ্চয় রসুলের (সা.) জীবনের রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্কৃষ্ট চরিত্র মাধুর্য’।

কেমন ছিলেন সেই মহামানব! কী রূপ ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবনাচার! আজ যদি সমগ্র পৃথিবীর মানুষ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শে ব্যক্তি জীবন গঠন করে, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া সমাজ জীবনেও পড়বে এবং গোটা সমাজের মানুষই সভ্য ও ভদ্রতার উচ্চ শিখরে পৌঁছে যাবে। সমাজ থেকে দূর হবে হিংসা, কৃপণতা ও অভদ্রতা। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ সংসারে পরস্পর মিলেমিশেই তাকে অবস্থান করতে হয়। এ জন্য অদৃষ্টের ওপর নির্ভর করে তাকে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার রক্ষা করতে হয়। ভদ্রতা মানুষের উত্তম ভূষণ। প্রকৃত ভদ্র লোকের সংজ্ঞা হচ্ছে, সে সত্যের উপাসক, সে মানুষের সমাদর করে এবং সচ্চরিত্র ও মহত্ত্ব তার গৌরব। যে এ গুণাবলিতে বিভূষিত হয় সে ব্যক্তিই প্রকৃত ভদ্রলোক। ভদ্রলোকেরা অদৃষ্টকে মেনে চলে। তারা নিজেদের ইপ্সিত বস্তুর জন্য কখনো নিজেকে হেয় ও অবজ্ঞতার পাত্র করেন না। তারা বিশ্বাস করেন আল্লাহপাকের মর্জি মোতাবেকই ঘটনাপ্রবাহ সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়, ভদ্রতার মতো গুণ এবং অদৃষ্টের ওপর বিশ্বাসের মতো বল আর নেই। আর হিংসার মতো কঠিন রোগও নেই। অন্য রোগের প্রতিষেধক কোনো না কোনোভাবে লাভ করা যায় কিন্তু হিংসার নিবৃত্তির ওষুধ পাওয়া খুবই দুরূহ ব্যাপার। হিংসা সম্পর্কে বিশ্ব মানবতার শিক্ষক রসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক, কেননা হিংসা নেক আমলকে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন কাষ্টখণ্ডকে ভস্মীভূত করে। (মেশকাত)।

সদ্যচারী ভদ্রলোক সে-ই, যে সব বিষয় হতে নিজের ইন্দ্রিয়গুলোকে সংযত, প্রতিনিবৃত্ত ও সুসংহত রাখতে যত্নবান হয় এবং সেগুলোর প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি রাখে।

পক্ষান্তরে সে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়োজিত রাখে এবং তদনুযায়ী কর্মযোগে জীবন অতিবাহিত করে। তার মাঝে আল্লাহর ভয় এতই প্রবল থাকে যে, যেসব বস্তু অসৎ, পাপ ও ঘৃণিত ও পঙ্কিলতার আবর্তে আচ্ছন্ন সেগুলো থেকে যে সব অবস্থায় দূরে অবস্থান করে। আল-কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন : ‘তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর।’ এ ভয়ই তার মাঝে ভক্তি ও আনুগত্যের প্রসার ঘটায়।

অপরদিকে কৃপণতা এমন একটি দোষ যা মানুষকে হৃদয়হীনতা ও নিষ্ঠুরতার পথে পরিচালিত করে। বস্তুত কৃপণতা হচ্ছে সব বদ অভ্যাসের সম্মিলিত রূপ। তা এমন একটি লাগাম বা রজ্জু, যা মানুষকে হৃদয়হীনতার পথে পরিচালিত করে এবং অন্যায় ও পাপের সয়লাব বইয়ে দেয়। এ জন্য কার্পণ্য ত্যাগ করে সবারই উচিত নিজেকে শুধরানো। কৃপণ লোকেরা আপনজনদের কাছে তার বদঅভ্যাস ও স্বভাবের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জিত হতে হয়। অপমানের তীব্র দহনে দগ্ধিভূত হতে হয়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য লোকেরা তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। মানুষের জীবনে ভালো-মন্দ, উত্তম-অধম, উঁচু-নিচু, মান-অপমান, ইজ্জত-সম্মান পাশাপাশি অবস্থান করে। সম্মান-সুখ্যাতি, যশ-গৌরব যেমন মানুষের মহত্তের দিকে নিয়ে যায় তেমনি হিংসা, কৃপণতা ও অভদ্রতা তার অপমানের পথকে প্রশস্ত করে তোলে। কৃপণের হাত অপেক্ষা ভিক্ষুকের হাত অনেক ভালো। কারণ ভিক্ষুক তার ভিক্ষাদাতার পুণ্য লাভের পথকে সুগম করে দেয়। ঠিক একইভাবে হিংসার বীজ যার অন্তরে অঙ্কুরিত হয় তা প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে এমন মজবুত হয়ে দাঁড়ায় যে, তার অপসারণ কোনোক্রমেই সম্ভব হয়ে উঠে না, আর উঠে না বলেই অভদ্রতার বাষ্প তার চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে তোলে। ফলে মানুষ তার মানবিক গুণাবলি থেকে বঞ্চিত হয়।

এমন কারও হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির খেদমতে যারা নিয়োজিত আছেন তারা যদি হিংসা, কৃপণতা ও অভদ্রতার দোষে দূষিত হন তাহলে তাদের অধীনস্থদের কল্যাণ ও মঙ্গল কোনোটাই আশা করা যায় না।

এতে করে ব্যক্তিগতভাবে অধঃপতন যেমন অপরিহার্য হয়ে উঠে তেমনি জাতীয় বিপর্যয়ের তুঙ্গ-তুরঙ্গে গোটা জাতি ভাসতে থাকে। এর কোনো ব্যত্যয় হয় না। এ চিন্তা মাথায় রাখলে আমাদের ব্যক্তিজীবন ও সমাজের চেহারা পাল্টে যাবেই।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর