মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাওর সফরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

হাওর সফরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

লেখা শেষে কলম তুলতে যাব ঠিক তখন খবর পেলাম আমার সব থেকে বয়সী হিতৈষী ঘাটাইলের মাদবর খাঁ আর ইহজগতে নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিত রাজিউন)। আল্লাহ তৌফিক দিলে তাকে নিয়ে আগামী পর্বে লিখব।

মাত্র সপ্তাহ আগে শ্রমজীবী মানুষের সবচেয়ে সম্মান-গৌরব আর অহংকারের মে দিবস চলে গেল। শতবর্ষ আগে আমেরিকার শিকাগোর মে দিবস আর আজকাল সারা পৃথিবীজোড়া পালন করা মে দিবস এক নয়। আগে ছিল মালিক-শ্রমিক দরকষাকষি, জনগণ শ্রমিকের পক্ষে। এখন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, জনগণ চরম জাঁতাকলে। এবারও শ্রমিক সমাবেশে স্লোগান উঠেছে জুলুমবাজ-অত্যাচারী মালিকের রক্ত চাই, ফাঁসি চাই। অথচ সেই অনুষ্ঠানেই হয়তো মালিকরা কেউ কেউ বক্তৃতা করেছেন। তাদের কারও কারও বক্তৃতায় শ্রমিকরা বিপুল হাত তালিও দিয়েছে। কেমন যেন চেতনার মহাদৈন্য চলেছে। তবুও মহান মে দিবস খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের এক ঐতিহাসিক সম্মানের দিন। শ্রম আর রক্ত-ঘামের জয় হোক এই প্রত্যাশাই করি। সেদিন রিকশা, অটো, সিএনজি শ্রমিকদের এক অসাধারণ নির্বাচন দেখলাম। কোনো ভোট কারচুপি নেই, বাক্স ছিনতাই নেই; চমৎকার এক নির্বাচন। কিছুটা লজ্জাই লাগল একটা শ্রমিক সংগঠন যা পারে আমরা কেন পারি না। পরদিন তার চেয়েও চমৎকার বিজয় মিছিল দেখে আরও স্তম্ভিত হয়েছি। বার বার মনে মনে ভেবেছি শ্রমিক আন্দোলন আবার কি যথাযথ গতি পাচ্ছে?

২ মে ছিল ঢাকা ডিভিশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স। টাঙ্গাইলে ছিলাম। এর আগে অনেক ভিডিও কনফারেন্স টিভিতে দেখেছি। কিন্তু সেদিন দেখলাম, সারা জেলার সরকারি কর্মচারীরা শহীদস্মৃতি পৌর উদ্যানে ত্রিপলে ঢাকা এক খাঁচায় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স দেখছেন। শ্বাসরুদ্ধকর ত্রিপলে ঢাকা কেন প্রথম প্রথম বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম, চারদিক অমন করে ঢেকে না নিলে টিভির পর্দায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভালোভাবে দেখা যাবে না। ওসব করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়তো কাজের গতি বাড়াতে চান। কিন্তু কাজীরা কাজের কাজ না করে সারা দিন অকাজই করছেন বেশি। দয়া করে এদিকেও একটু দৃষ্টি দেবেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। শেষ পর্যন্ত হাওরের বানভাসি মানুষদের দেখে আসার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। স্বচক্ষে তিনি যা দেখেছেন তাতে এক টন চাল, ডাল, আটা, ময়দা সেখানকার মানুষ বেশি পেলেও পাবেন। এটা আমার বিশ্বাস, হৃদয়বান মানুষের চোখে দেখার ফল। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের দক্ষিণাঞ্চল বিরান হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান চীন থেকে ঢাকার ওপর দিয়ে উড়ে যান। কিন্তু উড়োজাহাজে বসেও দুর্গত মানুষদের চোখে দেখার প্রয়োজন মনে করেননি। সেই নিদারুণ অবহেলার পরিণতি সবার জানা। নির্বাচনে পাকিস্তানের কর্তৃত্ব বাঙালিদের হৃদয় থেকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কোনো হৃদয়বান নেতা বা সরকারপ্রধান মানুষের দুঃখে চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে পারেন না, জননেত্রীর সম্প্রতি হাওর সফর তারই প্রমাণ। যদিও প্রধান বিরোধী দল তার সফর নিয়ে নানা কথা বলছে। বিরোধী দলের কাজ সরকারের ত্রুটি ধরা। তারা তা ধরছে, ধরুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে আরও অনেক আগে যেতে পারতেন। এমনকি তিন-চার বার গেলেও বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। বার বার গিয়ে কাজ না করার চেয়ে দেরিতে গিয়েও কাজের কাজ করা অনেক ভালো। বিরোধী দলও তেমন কাজের কাজ করেনি। তারা বলছে তাদের পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সব সরকারই বিরোধী দলকে বাধা দেয়। এসব দেশে কোনো সরকারই বিরোধী দলকে সহযোগিতা দিতে চায় না, সহযোগিতা করে না। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও তেমন সাড়া দেয়নি। কেমন যেন একটা নির্লিপ্ত ভাব। আমরা আগে কখনো এমন ছিলাম না। কেন এমন হলাম? আমাদের দয়ামায়া, মমতা, সুকোমল সব বৃত্তি কোথায় চলে গেল? আমরা কি সব মানবিক গুণ হারাতে বসেছি? অসময়ে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হয়েছে, সবকিছু ডুবে একাকার। নদীর যদি গভীরতা থাকত, পানি নেমে যেতে পারত তাহলে অমন হতো না। আমি বছরের পর বছর হাওরে-বাঁওড়ে চলাফেরা করেছি। শুকনায় হেঁটে, বন্যায় নৌকায়, স্পিডবোটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর, ধর্মপাশা, তাহেরপুর, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের পাদদেশ মহাদেও, কলমাকান্দা— কোনো জায়গা নেই যেখানে যাইনি। নদী ভরে যাওয়ায় সহজেই পানি খেত-খামারে উঠে যায়। যদি পানি একবার ভাটিতে নেমে যেতে পারত, মৌসুমি ফসল কৃষকের ঘরে উঠত তখন তাদের হাসিমুখ দেখলে বুক জুড়িয়ে যেত। অথচ এখন চরম সুখী দম্পতিও হাওরের মানুষের মুখ দেখে সুস্থ থাকবেন না। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ একজন অত্যন্ত মিষ্টিভাষী ভালো মানুষ। তার মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ধরা পড়লে দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবহেলার আর কী প্রমাণ চান? বাঁধে মাটি ফেলার কথা ছিল ৮ ফুট, ফেলা হয়েছে ১ ফুট। তার পরও অবহেলা খুঁজতে কোথায় যাবেন? শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে দেখেছি কোনো কোনো নদীর পাড়ে ছাগলের দড়ির মতো ৫-৭ ফুট চওড়া বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ৭ ফুটের জায়গায় ৭০ ফুট চওড়া করলে বছর বছর ভাঙত না, খেতের ফসল নষ্ট হতো না। তাতে হয়তো কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বছর বছর নতুন নতুন বরাদ্দ পেতে অসুবিধা হতো, উপরি প্রাপ্তি হতো না। কিন্তু মানুষ বেঁচে যেত। এলাকায় হাহাকার ছড়াত না।

হাওরে পাখি ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। বন্যার নামে এসব যদি অর্থ উপার্জনের ফাঁদ হয়ে থাকে তাহলে আমার কিছু বলার নেই। সরকারের সত্যিই যদি সদিচ্ছা থাকে মানুষ বাঁচাতে চায়, তাহলে পরিকল্পনামতো কাজ করতে হবে। খুব বেশি দরকার নেই। পরিকল্পনামতো কিছু শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করা গেলে মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা সামাল দিতে পারলে হাওরে অসময়ে বন্যা হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। পানি কখনো উজানে যায় না। একবার নেমে গেলে আর পিছু ফিরে দেখে না। তাই মেঘালয়ের গা ঘেঁষে যে কটি নদী তাতে কয়েক শ মাইল পরিকল্পিতভাবে শক্ত বাঁধ দেওয়া গেলে হাওরের মানুষের দুঃখ সহজেই দূর করা যেতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহস করতে পারেন, হাওর রক্ষা করতে পারেন না— এটা কেউ বিশ্বাস করে না। অন্তত আমি করি না। পরিকল্পিত হাওররক্ষা বাঁধ নির্মাণে পদ্মার অর্ধেক অর্থেরও প্রয়োজন হবে না। আমরা ভাঙনপ্রবণ যমুনার পাড়ের মানুষ। কিন্তু সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের নদী ভাঙনপ্রবণ নয়। সরকার ইচ্ছা করলে দুই পাশে কংক্রিটের দেয়াল তুলে ৩০০-৪০০ ফুট পাশ করে নদী খনন করা মাটি ফেলে ভরাট করে লোকজনকে বরাদ্দ দিয়ে মাঝে যাতায়াতের রাস্তা করে দিতে পারে। তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সবাইকে বাড়িঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যেমন রক্ষিত হবে, তেমনি হাওরের ফসল রক্ষা পাবে। ৭-৮-১০ ফুট পাশে আলগা মাটি ফেলে বছর বছর সরকারি অর্থের অমন শ্রাদ্ধ করার চেয়ে দুই পাশে কংক্রিটের দেয়াল তুলে নদীর মাটি ফেলে একদিকে বাঁধ অন্যদিকে মানুষের বসবাস এবং নদী গভীর করতে পারলে শত বছরের অভিশাপ থেকে হাওরের মানুষ মুক্তি পাবে। থৈ থৈ করা পানিতে অষ্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালপাড়া, সেখান থেকে বাজিতপুর বিরাট রাস্তা হচ্ছে। বাজিতপুর থেকে মোনায়েম খানের বাড়ি হুমায়পুর হয়ে অষ্টগ্রাম, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম— এসব রাস্তাকেও বাঁধের বিকল্প হিসেবে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করলে হাওরবাসীর উপকার হবে।

কোনো সন্দেহ নেই পদ্মা সেতু আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট শুভ প্রভাব ফেলবে। কিন্তু হাওরকে নিরাপদ করা গেলে এক ফসলের জায়গায় দুই ফসল হলে পদ্মা সেতুর চেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে হাওর-বাঁওড়ের ভূমিকা দেশের জন্য খুব একটা কম হবে না। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পরপর রাশিয়া আমাদের ২ লাখ টন খাদ্য দিয়ে কেন যেন ফেরত চেয়েছিল। কেবল স্বাধীন হয়েছি তাই আমরা মারাত্মক বিপদে পড়েছিলাম। কেন যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ইন্দিরাজির জন্য ছোট্ট একটা চিঠি দিয়ে আমাকে দিল্লি পাঠিয়েছিলেন জানি না। তখন এ আর মল্লিক ছিলেন দিল্লিতে আমাদের রাষ্ট্রদূত। পালামের কাছে ৯ নম্বর বসন্ত বিহারে থাকতেন তিনি। তার স্ত্রী ছিলেন একজন অসাধারণ মহিলা, মায়ের মতো মানুষ। আমাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। প্রথম উঠেছিলাম লোদি হোটেলে। তিন বেডের রুম। ৫০ ডলার ভাড়া। তখন ডলার ছিল সাড়ে ৪-৫ টাকা। পরদিন নিয়ে তোলা হয়েছিল ত্রিপুরা স্টেট গেস্টহাউসে। সেখান থেকে ১ নম্বর সফদর জং রোড ইন্দিরাজির বাড়ি। আমার হাত থেকে বঙ্গবন্ধুর চিঠি পেয়ে তিনি দারুণ খুশি হয়েছিলেন। আমাদের খাদ্যের অভাব, আমরা ৩ লাখ টন খাদ্য চাই— বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন আবেদন নিয়ে পরদিনই লোকসভায় আলোচনা হয়। মহারাষ্ট্রের এক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লোকসভার সদস্য বাংলাদেশের খাদ্য সাহায্যের ওপর এক অসাধারণ বক্তব্য দেন। দর্শক গ্যালারিতে বসে তাদের কথা শুনে বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতীয় নেতাদের উষ্ণতা ও দরদ দেখে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে গিয়েছিল। ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি সেই দেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। তাহলে সেটা হবে আমাদের জন্য সব থেকে বড় লজ্জা। আমরা এক বেলা খেলে তারাও খাবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! বাঙালিদের নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুরোধমতো আপনি তাদের জন্য খাদ্য বরাদ্দ করুন। আমরা আপনার সিদ্ধান্ত সমর্থন করব।’ সেদিনই ৩ লাখ টন খাদ্য বরাদ্দ করা হয়েছিল আমাদের জন্য। তখন ভারতেও খাদ্য ঘাটতি ছিল। তার মধ্যে পাঞ্জাব ছিল সবচেয়ে খাদ্য ঘাটতি এলাকা। আর আজ সেই পাঞ্জাব খাদ্যে ভারতের গর্ব। সেটা ধান, চাল, আটা, ময়দা, মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আলু সবকিছুতে। আমরা যদি সামান্য একটু দৃষ্টি দিতে পারি তাহলে আমাদের হাওরও অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আগে ছিল জাল যার জলা তার। এখন মস্তান যার হাওর তার। এই নীতির একটু অদলবদল করে সাধারণ মানুষকে দিয়ে দিতে পারলে মৎস্যসম্পদে বিপ্লব ঘটতে পারে। আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দুঃসময়ে যখন হাওরে গেছেন, তখন একটা কিছু হবেই হবে। হাওরবাসীদের ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদের সুদের অর্ধেক মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুদের অর্ধেক মওকুফ কেন, পুরো ঋণ মওকুফ করতে অসুবিধা কোথায়? তাদের যে ক্ষতি হয়েছে কী করে তারা তা পূরণ করবেন? সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করলে সে বছর যে ফসল ফলবে সে ফসল তো সে বছরই লাগবে। উদ্বৃত্ত হলে তবে তো ঋণ শোধ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনার কথা বা নির্দেশ কিন্তু এনজিওগুলো শুনছে না। তারা তাদের ঋণ আদায়ে অসহায় মানুষদের ভিটেমাটি ছাড়ার চেষ্টা করছে। প্রিয় নেতা শেরেবাংলা ঋণ শালিসি বোর্ড করে মহাজনের হাত থেকে বাংলার কৃষককে বাঁচিয়ে অমর হয়ে আছেন। আপনিও হাওরের মানুষকে নব্য মহাজনদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। ‘অর্ধেক মানুষ না মারা গেলে দুর্গত এলাকা নয়’ এমন বলা অমানুষ সচিবটা কি এখনো আছে? নাকি মানুষ নামের অযোগ্য যিনি তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে? জানতে বড় ইচ্ছা করে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির স্বপ্ন দেখার অভিযোগে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব গেছে। যদিও পরে স্বপ্ন দেখারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। তাই বলে পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতিই হয়নি বা হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। যা হওয়ার হচ্ছে। বিদেশি প্রাক্কলনে এখন যে কাজ হয় তা স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়ে ৪-৫ গুণ বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮-১০ গুণ। তাই টপ টু বটম সবার লাভ। ন্যায্য প্রাক্কলনে উন্নয়ন হলে কারও কোনো প্রশ্ন থাকত না। কিন্তু কোথাও কোনো ন্যায্য নেই, অন্যায্য ৫-৭-১০ গুণ বেশি খরচে কাজ হচ্ছে। আজ হোক আর কাল দেশবাসীকে এই ঋণের বোঝা বইতে হবে। হাওরবাসীদের কত ঋণ দেওয়া হয়েছে তা জানতে কয় ঘণ্টা প্রয়োজন? সব ঋণ মওকুফ করে দিতে অসুবিধা কোথায়? এক পরিবারে মাসে ৩০ কেজি চাল, ৫০০ টাকা— এটা কোনো কাজের কথা নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি ঘুরে এসেছেন। হাওরবাসীদের ভিক্ষে নয়, মর্যাদা দিন। কাজ নেই কাজ দিন। একেবারে সম্ভব না হলে হাওরের লোকদের দিয়ে ঢেউ গুনিয়ে মজুরি দিন। ল্যাঠা চুকে যাক। জানি একমাত্র আপনিই পারেন। আপনি অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। রাজনীতিতে দিনকে রাত, রাতকে দিন করেছেন। হাওরবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়ে জগেক চমকে দিতে আর একবার না হয় তেমন কিছু করুন। হাওরে আজ নিঃস্ব, রিক্ত, সর্বহারারাই শুধু বিপদগ্রস্ত নয়। সম্মানী, সম্ভ্রান্ত গৃহস্থরাও অসহায়। তারা হাত পাততে পারছে না। অথচ জীবনও চলছে না। তাদের ব্যাপারটাও দেখুন। অসহায়, সর্বস্বান্ত হাওরের মানুষদের রক্ষা করা এবার আপনার সরকারের দক্ষতার এক মারাত্মক পরীক্ষা। প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করায় শুধু আওয়ামী লীগের লোকদেরই জায়গা হচ্ছে। তেমন যেন না হয়। সূর্য কাউকে বাচ-বিচার করে আলো দেয় না, বাতাস কাউকে বাদ দিয়ে কারও ওপর বয় না। আপনার, আপনার সরকার এবং দলের এবারের কাজ হওয়া উচিত সেই রকম দলমতনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনার হাওর সফর শেষে ফেরার পথে মস্ত বড় যানজটে পড়েছিলাম। কিছু মনে করবেন না, সরল বিশ্বাসে বলছি। গণভবন, তেজগাঁও কার্যালয় এবং বঙ্গভবনে হেলিকপ্টার ওঠানামার প্রচুর জায়গা আছে। ইচ্ছা করলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং আপনি শহরে চলাফেরার সময় না হয় না হলো, যখন বাইরে যান তখন আপনাদের বাসভবন অথবা কার্যালয় থেকে সরাসরি গেলে এবং ফিরলে মানুষের অনেক ভোগান্তি কমে। দীপ-কুঁড়ি-কুশিকে নিয়ে সেদিন বিমানবন্দর থেকে ফিরছিলাম। যে কুঁড়িকে আপনি অনেকবার কোলে নিয়েছেন। ঠাণ্ডার দেশ বিলেত থেকে ফিরে এসি ছাড়া গাড়িতে ফ্যালকন হলের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা প্রচণ্ড গরমে বড় বেশি কষ্ট পাচ্ছিল। একটু ভেবে দেখবেন গণভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন অথবা তেজগাঁও কার্যালয়ে হেলিকপ্টারে যেতে বলছি না। বাইরের জেলায় যখন যান তখন যদি অহেতুক বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ না করে সরাসরি হেলিকপ্টারে আকাশে উঠে যান তাহলে সেদিন শহর যানজটে অচল হওয়ার হাত থেকে অনেকটা বেঁচে যেত। মেহেরবানি করে একটু ভেবে দেখেন, দেশবাসী খুশি ও কৃতার্থ হবে।

     লেখক : রাজনীতিক।

সর্বশেষ খবর