শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
দৃষ্টি আকর্ষণ

আইমান কি মা ও নানী হত্যার বিচার পাবে না?

আইমান কি মা ও নানী হত্যার বিচার পাবে না?

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় বীরসিংহপাড়া গ্রামের ট্রিপল মার্ডার কেসের ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিরা কি তাদের অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাবে? আড়াই বছরের নিষ্পাপ শিশু আইমান কি তার মা ও নানী হত্যার বিচার পাবে না? এমন একটি প্রশ্ন ইতিমধ্যে দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে। গত বছরের ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় মো. শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম ওরফে রিপন মিয়া, মো. জুয়েল মিয়া, আলাউদ্দিনসহ ১২ জন সশস্ত্র দুষ্কৃৃতকারীর সংঘবদ্ধ ও সুপরিকল্পিত হামলার শিকার হন আইমানের মা, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পেটি অফিসার মো. কামাল হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তার, শাশুড়ি জাহানারা খাতুন এবং শ্যালক সুজাত মিয়া। সশস্ত্র হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আইমানের নানী জাহানারা খাতুন। তাদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশী শিমুল মিয়া ছুটে এলে হামলাকারীদের অস্ত্রের আঘাতে তিনিও আহত হন। এ সময় এলাকাবাসী ছুটে এসে মো. শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন নামের একজন ঘাতককে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় আইমানের মা শারমিন আকতার, প্রতিবেশী শিমুল মিয়া এবং মামা সুজাত মিয়াকে মাধবপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রথমোক্ত দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুজাত মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং পরবর্তীতে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমরিতা ও আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে অলৌকিকভাবে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পায় হামলায় নিহত জাহানারা খাতুন জানুর নাতি ও শারমিন আক্তারের একমাত্র পুত্র আইমান। আইমান বর্তমানে তার দাদির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। অবোধ শিশুটি মা ও নানীর স্নেহ-যত্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিষ্ঠুরভাবে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত পারিবারিক বিরোধ। নিহত জাহানারা খাতুন জানুর স্বামী তথা নিহত শারমিন আক্তারের বাবা গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘদিন যাবৎ বড় ছেলেসহ সৌদি আরবে কর্মরত। গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা খাতুন জানু ছোট ছেলে সুজাত মিয়া (১২)-কে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। জমিজমা নিয়ে ইতিমধ্যে গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে তার অন্যান্য ভাই ও ভাতিজাদের বিরোধ বাধে। এ বিরোধের সূত্র ধরে শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিনের নেতৃত্বে ভাই ও ভাতিজারা গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা খাতুন জানু এবং ছোট ছেলে সুজাত মিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ঘটনাক্রমে গিয়াস উদ্দিনের বিবাহিত মেয়ে শারমিন আক্তার মায়ের কাছে বেড়াতে এলে সেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বদানকারী শাহ আলম ওরফে তাহের উদ্দিন ধরা পড়লেও অন্যরা পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে পলাতক আসামিদের রেহাই দিতে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। নিহত জাহানারা খাতুন ও শারমিন আক্তারের স্বজনদের অভিযোগ, খুনিচক্রের পলাতক সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় একজন নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের পিএসকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করতে সক্ষম হয়। তাদের প্ররোচনায় মাধবপুর থানা পুলিশ ও হবিগঞ্জের ডিবি পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার জাহানারা খাতুন জানুর জামাতা, নিহত শারমিন আক্তারের স্বামী বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জেটি অফিসার মো. কামাল হোসেন মাধবপুর থানায় মামলা দিতে গেলে অদৃশ্য মহলের ইশারায় মাধবপুর থানা মামলা নিতে অস্বীকার করে। তার বদলে কামাল হোসেনের খালু শ্বশুর হাজি মোহন মিয়া (৭৫)কে বাদী সাজিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা লিপিবদ্ধ করা হয়। মোহন মিয়াকে লাশ শনাক্তকরণের জন্য কাগজে সই করার জন্য বলে থানা পুলিশ। তার সেই সইয়ের ভিত্তিতে শুধু একজনকে আসামি করে মাধবপুর থানা পুলিশ মামলা নেয়। মামলা নং-৩১ তাং ২৪/০৮/২০১৬, ধারা ৩২৬/৩০৭/৩০২ পেনাল কোড। মোহন মিয়া তাকে বাদী করে কৃত মামলার বিষয়ে জানতে পেরে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করেন যে তিনি কোনো মামলা দায়ের করেননি। পরবর্তীতে জাহানারা খাতুন জানুর স্বামী ও শারমিন আক্তারের পিতা মো. গিয়াস উদ্দিন স্ত্রী ও কন্যা খুনের ঘটনার বাদী হয়ে হবিগঞ্জের বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন। মামলা নং ২২০/১৬ খ্রিঃ তাং ৩০/০৮/২০১৬, ধারা ১৪৮/৪৪৮ /৩২৪/ ৩০৭/ ৩০২/১০৯/১৪৯ পেনাল কোড। তবে বিজ্ঞ আদালত মাধবপুর থানার মামলা নং ৩১ তাং ২৪/৮/২০১৬ তদন্তাধীন থাকায় গিয়াস উদ্দিনের করা সিআর মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। মাধবপুর থানায় ৩১ তাং ২৪/০৮/২০১৬ নম্বর মামলাটি ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীরা আসামিদের নাম উল্লেখ করলেও ডিবি পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনকভাবে তা এড়িয়ে গেছেন। খুনিদের হাতে গুরুতর জখম সুজাত মিয়ার জবানবন্দি নেওয়ারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছে।

স্বজনদের অভিযোগ মাধবপুর থানা পুলিশ নিহত শারমিন আক্তারের স্বামী ও নিহত জাহানারা খাতুনের জামাতা কামাল হোসেনের মামলা গ্রহণ না করে তারা যে আসামি পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে সে প্রমাণই রেখেছে। হবিগঞ্জের মাধবপুরের চাঞ্চল্যকর তিন খুনের আসামিদের রক্ষায় রাজনৈতিক মহলের চাপ সরকার এবং পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে। যা কোনোভাবেই কাম্য হওয়া উচিত নয়।  স্বজনরা এ ব্যাপারে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

কালাম আজাদ

সর্বশেষ খবর