দেশের সিলেট ও রংপুর বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা হানা দিয়েছে। ইতিমধ্যে তা লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়েও দাঁড়িয়েছে। সিলেট বিভাগের বন্যাকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবেও তুলনা করা যায়। হাওর এলাকার আগাম বন্যা সিলেট বিভাগের লাখ লাখ মানুষের সারা বছরের খোরাক যেমন কেড়ে নিয়েছে তেমন দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর আঘাত হেনেছে নিষ্ঠুরভাবে। বিদেশ থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানির কঠিন বাস্তবতার মুখে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। হাওরের আগাম বন্যার পর হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এবং সিলেট ও মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা থাবা বিস্তার করেছে মাস খানিক আগে থেকে। ভারি বৃষ্টিপাতে অবস্থা এমনই নাকাল করেছে যে মনিপুর রাজ্যের রাজধানী ইস্ফলের রাজপথে নৌকা চলাচল করছে। ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের জন্যও বিপদ ডেকে আনবে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল। এমনিতেই হাওর এলাকার লাখ লাখ মানুষ আগাম বন্যায় সারা বছরের খোরাকি হারানোয় তারা সরকারি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বন্যার করাল গ্রাস অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির যে আরও অবনতি হবে তা সহজে অনুমেয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকাও বন্যার হুমকির মুখে। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে কয়েক দিন আগেই। লালমনিরহাটে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বিপুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ভাটির এই দেশে বন্যা নতুন কিছু নয়। এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেহেতু বেশি সেহেতু সে আঘাতের পরিসর বড় হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্বভাবতই বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকারকে সময় থাকতেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি সাংবার্ষিক বন্যার কবল থেকে জানমাল বিশেষত ফসল রক্ষায় কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। সমস্যা মোকাবিলায় নদ-নদী খনন করে নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সেটি সম্ভব হলে সারা বছর নদ-নদীতে যেমন নাব্য বজায় থাকবে তেমন বন্যার আশঙ্কা অনেকাংশে রোধ করা যাবে।