মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

শাওয়ালের ছয় রোজা

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

শাওয়ালের ছয় রোজা

সিয়াম বা রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম আমল। পবিত্র কোরআনে কারিমে এ ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদাররা, আগের উম্মতদের মতো তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

রোজা সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে। ১. ফরজ, ২. নফল, ৩. মাকরুহ ৪. হারাম। শুধু এক মাস পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজাগুলো রেখেই রোজাকে ভুলে যাওয়া যাবে না, তাই মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র মাহে রমজান ছাড়া আরও কিছু রোজাতে বিশেষ ফজিলতের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩-১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজা।

পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখতে গিয়ে আমাদের থেকে হয়ে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পুষিয়ে নিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য শাওয়ালের ছয় রোজার ব্যবস্থা রেখেছেন। এ ছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে মিলিয়ে আরও ছয়টি রোজা রাখতে মহান আল্লাহতায়ালা দয়া করে সারা বছর রোজার রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ফরজ রোজা পালন করল, অতঃপর শাওয়াল মাসেও আরও ছয় দিন রোজা পালন করল,  সে ব্যক্তি যেন সারা বছর ধরে রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি : ২/১৬২) উল্লিখিত হাদিসকে সূরা আনআমের ১৬০ নং আয়াতের সঙ্গে মিলিয়ে বিশ্লেষণ করলে জিনিসটি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। সূরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল, সে দশ গুণ সওয়াব পাবে।’ এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল, সে দশ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর তার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজার দশ গুণ ষাট দিন (অর্থাৎ দুই মাস) দুই মাস মিলিয়ে নিলে সর্বমোট বারো মাস রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, যে কোনো কারণে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে শাওয়াল মাসে কাজা রোজা আগে রাখবে, নাকি ছয় রোজা আগে রাখবে। আবার এই রোজা রাখলেই কি কাজা রোজা আদায় হয়ে যাবে, নাকি আলাদা আলাদা রাখতে হবে? এর জবাব হলো, কাজা রোজা যেহেতু আমাদের জন্য ফরজ, তাই আগে কাজা রোজা আদায় করতে হবে। আর ফরজের কাজার সঙ্গে যেহেতু নফলের নিয়ত করা যায় না, তাই কাজা রোজা ও ছয় রোজা আলাদা আলাদাই রাখতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত ৫/৪৭৬)

শাওয়ালের ছয় রোজা শুধু নারীদের জন্য ধারণাটি সঠিক নয়। এটি নারী-পুরুষ সবার জন্যই সুন্নত। পবিত্র শাওয়ালের শুরুতেই তা একনাগাড়ে রেখে দেওয়া উত্তম। তবে শাওয়ালের মাঝে বা শেষে, বিরতি  দিয়ে দিয়ে ছয়টি রোজা রাখলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

     লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর