বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দৃষ্টান্তমূলক রায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের ইতি ঘটুক

শিশু গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতন করে মৃত ভেবে ডাস্টবিনে ফেলে আসা গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। পৈশাচিক আচরণের প্রতিভূ ওই নারীকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ অর্থ আদায়ের পর তা নির্যাতিত আদুরীকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আসামিকে আরও এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মঙ্গলবার এ দৃষ্টান্তস্থানীয় রায় দেন। আদুরী নির্যাতন মামলায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। আদুরীর মা বলেছেন, শুনেছি গরিবে বিচার পায় না। তবে তারা বিচার পেয়েছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীর দাবি তারা ন্যায়বিচার পাননি, রায়ে তারা সংক্ষুব্ধ। স্মর্তব্য, রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১ সুলতানা প্যালেসের বাসিন্দা নওরীন জাহান নদী শিশু গৃহকর্মী আদুরীর ওপর কথায় কথায় নির্যাতন চালাতেন। ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, গরম ইস্ত্রির ছেঁকা দিয়েও পৈশাচিকতার প্রমাণ রাখা হতো। নির্যাতনে সংজ্ঞা হারানোর কারণে তাকে মৃত ভেবে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার ডাস্টবিনে ফেলে রেখে আসা হয়। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কঙ্কালসার এক শিশুকে ডাস্টবিনে সংজ্ঞাহীনভাবে পড়ে থাকতে দেখে প্রত্যক্ষদর্শী দুই নারী পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মুমূর্ষু অবস্থায় আদুরীকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। একদিন পর তার জ্ঞান ফিরলে আদুরী তার ওপর গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের কথা জানায়। এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে গৃহকর্ত্রী নদী ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আমাদের দেশে গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন এক সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে অবস্থাপন্ন ঘরের বিলাসী গৃহকর্ত্রীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। আদালতের দৃষ্টান্তমূলক রায় তাদের আচরণে লাগাম পরাতে পারলে তা একটি বড় অর্জন বলেই বিবেচিত হবে। আমরা আশা করব এ রায় থেকে গৃহকর্মী নির্যাতনকে যারা নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন তারা সতর্ক হবেন। গৃহকর্ত্রী নদীর মতো পরিণাম না চাইলে তারা নিজেদের শুধরে নেবেন। দেশের বিচার ব্যবস্থার মর্যাদা বৃদ্ধিতেও এ রায় অবদান রেখেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা দৃঢ়করণে রায়টি ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর