শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাদক রুখতে হবে

মাওলানা আবদুর রশিদ

মাদক রুখতে হবে

মাদক দুনিয়া জুড়েই এক ভয়াবহ সমস্যার নাম। প্রায় প্রতিটি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে মাদকের সম্পর্ক। এ মুহূর্তে ইয়াবা নামের মাদকের আগ্রাসন দেশের যুব সমাজের জন্য সাক্ষাৎ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলার জন্যও তা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে আরও কড়া আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য ঘোষণা এবং এর পাচার ও বিপণনকে কঠোর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে প্রচলিত আইনের সংশোধনী আনা হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য মানুষের বোধশক্তি কেড়ে নেয়। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মাদকসেবীরা। মাদকের প্রভাবে মানুষ জড়িয়ে পড়ে অপরাধের সঙ্গে। মাদকের অর্থ জোগাতে স্ত্রী এমনকি সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকের খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রামে আসলাম নামের এক মাদকাসক্ত বাবা তার ১১ মাসের মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। হালিশহর এ ব্লক এলাকার পোশাক শ্রমিক নুসরাত জাহানের সঙ্গে আসলামের বিয়ে হয় তিন বছর আগে। বিয়ের দুই বছর পর তাদের কন্যাসন্তান হয়। আসলাম স্ত্রীর কাছ থেকে নেশার টাকা না পেয়ে এ বছরের ২৪ এপ্রিল গোপনে শিশুটিকে বিক্রি করে দেন।

গত ২৪ এপ্রিল ঘুম থেকে জেগেই বুকটা ধক করে ওঠে নুসরাতের। বিছানায় নেই তার ১১ মাস বয়সী মেয়ে। সাতসকালে বেকার স্বামী ঘরে না থাকায় কেমন যেন সন্দেহ হয় তার। দুপুরে ঘরে ফেরেন স্বামী আসলাম। মেয়ে কোথায় স্ত্রীর এই প্রশ্নে ভীষণ রাগ দেখান স্বামী। দাবি করেন, তিনি বের হওয়ার সময় শিশুটি ঘরেই ছিল। একমাত্র সন্তান হাফছা মারজানকে হারিয়ে দিনরাত পাগলের মতো খুঁজে বেড়ান নুসরাত জাহান।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে নুসরাত গত মঙ্গলবার নিশ্চিত হন শিশুটিকে কিনেছেন দেওয়ানহাট এলাকার সেকান্দর-রাশেদা দম্পতি। প্রথমে রাশেদার বাড়িতে গিয়ে সন্তানকে ফেরত চান তিনি। কিন্তু তারা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাত চলে যান হালিশহর থানায়। মানব পাচার আইনে তিনি মামলা করার পরপরই নুসরাতের স্বামী আসলাম ও শিশুটিকে কিনে নেওয়া সেকান্দরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত বুধবার বিকালে আদালতে এ মামলার শুনানি চলে। এ সময় এজলাস কক্ষে দাঁড়ানো দুই মা-ই অঝোরে কাঁদছিলেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান আদেশ দেন, শিশুটি পাবেন গর্ভধারিণী মা। হারানো শিশুকে ফিরে পেয়ে নুসরাতের চোখে আনন্দের অশ্রু। অন্যদিকে শিশুটিকে আঁকড়ে ধরে তখন ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন রাশেদা।

বাদীর আপত্তি না থাকায় গত বুধবার সেকান্দরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। আসলামের পক্ষে আদালতে জামিনের কোনো আবেদন করা হয়নি। আদালত প্রাঙ্গণে শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা নুসরাত জাহান বলেন, ‘নেশার টাকার জন্য নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়, এমন বাবা যেন কারও না হয়।’

ইসলামে সব ধরনের মাদকদ্রব্যের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে হারাম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর মতে, মদপান সবচেয়ে গুরুতর কবিরা গুনাহ এবং নিশ্চিতভাবে যাবতীয় নোংরা ও গর্হিত কাজের প্ররোচনার উৎস। —তাবারানি ও হাকেম।

হজরত ইবনে ওমর (রা.), হজরত আনাস (রা.) এবং হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একাধিক হাদিসে শরাবখোরের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করা হয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রসুল (সা.) বলেন, সব মাকদদ্রব্য মদের পর্যায়ভুক্ত এবং সব মদই হারাম। পার্থিব জীবনে যে মদপানে অভ্যস্ত ছিল এবং তওবা না করে মারা যায়, পরলোকে সে জান্নাতি পানীয় থেকে বঞ্চিত থাকবে। —বোখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, আবু দাউদ, তাবারানি ও বায়হাকি। মুসলিম ও নাসায়ি শরিফে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, মাদকদ্রব্য সেবনকারীর জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে : আল্লাহ তাকে তিনাতুল খাবালের পানীয় পান করাবেন। আরজ করা হলো : ইয়া রসুলুল্লাহ! তিনাতুল খাবাল কি? তিনি ইরশাদ করলেন : জাহান্নামিদের ঘাম ও মলমূত্র। বোখারি-মুসলিমের আর এক হাদিসে আছে, দুনিয়ার মদ যে পান করবে, আখেরাতের পানীয় তার জন্য হারাম করা হবে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হাদিসে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন,  রসুল (সা.) বলেছেন : মদপানে চির অভ্যস্ত ব্যক্তি মূর্তিপূজকের সমান। বলা হয়েছে, মদপানকারী তওবা না করে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। নাসায়িতে হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেন, মাতা-পিতার অবাধ্য ও মদপানে অভ্যস্ত, এ দুজন জান্নাতে যাবে না। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনজনের জন্য আল্লাহ জান্নাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মদপানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য এবং দাইয়ুস। দাইয়ুস হচ্ছে সে লোক, যে তার পরিবারের সদস্যের অসৎ কাজে লিপ্ত জেনেও তা প্রতিহত করে না।  মাদক আগ্রাসন বন্ধে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে এমনটিই প্রত্যাশিত। পাশাপাশি এ সমস্যার মোকাবিলায় দেশের আলেম সমাজকেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে।  

লেখক : ইসলামী গবেষক।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর