শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

গরিবরা জান্নাতে আগে প্রবেশ করবে

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

গরিবরা জান্নাতে আগে প্রবেশ করবে

দুনিয়াতে আল্লাহ কাউকে ধনী বানিয়েছেন, কাউকে গরিব বানিয়েছেন। কেউ সম্পদশালী, কেউ রিক্ত হস্ত। কেউ ভোগ-বিলাসে মত্ত। কেউবা দুই বেলা ঠিকমতো খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খায়। সবাই আল্লাহর বান্দা।  যাকে আল্লাহ ধন দিয়ে পরীক্ষা করেছেন সে যদি সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করে এবং বিপথগামী হয় তাহলে তার জন্য সেটা কেয়ামতের দিন বিপদের কারণ হবে। আর যাকে মহান প্রভু দরিদ্র বানিয়ে অন্যের মুখাপেক্ষী করেছেন সে যদি সঠিক পথে চলতে পারে তাহলে জান্নাতে আগে প্রবেশ করবে। ধনীদের তুলনায় গরিবরা বেশি জান্নাতে যাবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি বেহেশতের দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখলাম যে, তার অধিবাসীদের অধিকাংশই গরিব মিসকিন। আর দোজখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসী নারী। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, গরিবরা আগে বেহেশতে যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, গরিব মুহাজিররা কেয়ামত দিবসে ধনবানদের চেয়ে ৪০ বছর আগে বেহেশতে পৌঁছে যাবে। (মুসলিম)। এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অভাবগ্রস্ত লোকরা ধনী লোকদের পাঁচশ বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে এবং তা হবে কেয়ামতের অর্ধ দিন। (তিরমিজি)। প্রিয় পাঠক! আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায়, গরিবদের প্রতি বিদ্রূপ-উপহাস করে। তাদের হেয়প্রতিপন্ন করে। যা কোনোভাবেই উচিত নয়। হতে পারে সেই গরিব ব্যক্তিটি আল্লাহর দরবারে অনেক প্রিয়। হজরত সহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ দিয়ে গমন করল। তিনি তখন তার কাছে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, যে লোকটি এই মাত্র চলে গেল তার সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলল যে, ইনি তো অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। আল্লাহর কসম, ইনি এরূপ যোগ্য ব্যক্তি যে, যে কোনো পাত্রীর কাছে তার বিবাহের পয়গাম গেলে সে তার সঙ্গে বিবাহে রাজি হবে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি ওই স্থান দিয়ে চলে গেল। রসুলুল্লাহ (সা.) তার সম্পর্কেও কাছে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, এ লোক সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলল, এ ব্যক্তি তো এক দরিদ্র মুসলমান। সে তো এরূপ অযোগ্য যে, যে কোনো পাত্রীর প্রতি সে বিবাহের পয়গাম পাঠালে কেউই তা গ্রহণ করবে না। আর সে যদি কারও ব্যাপারে কোনো সুপারিশ করে তাও কবুল করা হবে না। সে কোনো কথা বললে সে কথাও শোনা হবে না।  তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি যার প্রশংসা করলে সারা জগৎ তার মতো লোকে পরিপূর্ণ থাকলেও তাদের সবার তুলনায় এ (গরিব) লোকটি উত্তম। যাকে তুমি অযোগ্য বলছ। (বোখারি, মুসলিম)।      

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর