সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় গত মঙ্গলবার প্রকাশ পেয়েছে। এ রায় সরকারের ক্ষমতা চর্চার জন্য দৃশ্যত বিসংবাদ ডেকে আনলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সুসংবাদ বলে বিবেচিত হচ্ছে। হাই কোর্টেও ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল বিজ্ঞ বিচারকদের সুচিন্তিত রায়ে। রাষ্ট্রপক্ষ সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ কিছু পর্যবেক্ষণসহ তা খারিজ করে দেয়। সাড়া জাগানো এই রায়ের ফলে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা আগের মতো বিচার বিভাগের হাতেই ন্যস্ত রয়েছে। ২০১৪ সালে সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিলের শুনানিতে ১০ অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাত সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজের রায় দেয়। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত ছিল। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৪ সালের ষোড়শ সংশোধনীতে সে ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। সন্দেহ নেই, ভারত-শ্রীলঙ্কা-মালয়েশিয়াসহ দুনিয়ার বহু দেশে সংসদের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। গণতান্ত্রিক চেতনার দিক থেকে সে ক্ষমতাকে অসঙ্গত বলার সুযোগ নেই। কিন্তু বেশ কিছু দেশে এ নিয়ে সমস্যারও উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের দেশে দলীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তোলার কোনো স্বাধীনতা সংসদ সদস্যদের না থাকায় দলের ভুল সিদ্ধান্তকে তারা সায় দিতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পিত হলে বিচারকদের দলীয় নীতিনির্ধারকদের করুণা অনুযায়ী চলতে হতো। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের আস্থার সম্পর্ক ও সার্বভৌম অবস্থানের স্বার্থেই বিচারক অপসারণের ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে থাকার বিষয়টি প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।