শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

হাদিসের আলোকে কোরবানির গুরুত্ব

হাফেজ কারি মাওলানা মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী


হাদিসের আলোকে কোরবানির গুরুত্ব

রসুল (সা.) কোনো সময় কোরবানি ত্যাগ করেননি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) মদিনা শরিফে ১০ বছর অবস্থান করেছেন।  আর প্রতি বছরই কোরবানি করেছেন। বিদায় হজে একশ উট কোরবানি দিয়েছেন। তন্মধ্যে স্বহস্তে ৬৩টি উট কোরবানি করেন। বাকিগুলো  হজরত আলী (রা.)-এর কাছে সোপর্দ করেছেন। একসঙ্গে এত উট কোরবানি করা, কোরবানির ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে। কোরআনের আয়াত, অন্যান্য হাদিস শরিফ ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারাও স্পষ্ট হয় যে, কোরবানি ইবাদত হওয়া হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়; কিন্তু ঈদুল আজহার দিনে কোরবানি ওয়াজিব হওয়া হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনার স্মরণে আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ আমরা কোরবানিকে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পবিত্র স্মৃতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি। মুসলিম উম্মাহর নিকট হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা এমন একটি স্মারক যা প্রতি মুহূর্তে হৃদয়ের মাঝে বিরাজমান। আর এর আকুল আবেগ অন্তরের অন্তঃস্থলকেও করে তোলে আলোড়িত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে লোক সকল! প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রতি বৎসর কোরবানি করা আবশ্যক।’ [মিশকাত শরিফ]। তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানি করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহর নিকট আর নেই।’ [মিশকাত শরিফ] রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়।’ [মিশকাত] রসুল (সা.) কোরবানির দিনের ব্যাপারে বলেছেন, আজ আমাদের প্রথম কাজ হলো নামাজ পড়া, তার পরের কর্তব্য হলো কোরবানি করা। যে ব্যক্তি এরূপ আমল করল, সে আমার তরিকার ওপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের আগেই কোরবানি করল, তার কোরবানি দুরস্ত হয়নি; বরং তার কোরবানি শুধু গোশত খাওয়ার জন্য হলো। ছওয়াবের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকল না। হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বার্ণিত, ‘সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! এই কোরবানির [বিধান] কী? তদুত্তরে বললেন, এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসুল! এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ নিহিত আছে? রসুল (সা.) বললেন, কোরবানির জন্তুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যায়, সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে  আল্লাহর রসুল! ভেড়ার পশমেও কী এই ছওয়াব হবে?  রসুল বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ [ইবনে মাজাহ-২ : ২২৬, মিশকাত-১ : ১২৯] হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘রসুল (সা.) আমাকে অসিয়ত করে গেছেন আমি যেন তাঁর পক্ষ হতে কোরবানি করি। সুতরাং আমি তাঁর পক্ষ হতে কোরবানি করছি।’ [তিরমিজি, আবু দাইদ]।

কোরবানি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট একটি বিধান। যাকে আল্লাহতায়ালা অর্থ-সম্পদ দিয়ে সচ্ছলতা দিয়েছেন, তার জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। তদুপরি যে ব্যক্তি অলসতা ও অবহেলায় কোরবানি ত্যাগ করে সে মুসলমানের কাতারে কীভাবে দাঁড়াবে?  আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর সামনে কীভাবে মুখ দেখাবে? হাদিস শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, অন্য রেওয়ায়েতেও এভাবে বর্ণিত রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে।’  [মুস্তাদরাকে হাকিম]

বলাবাহুল্য, ঈদগাহে কেবল মুসলমানরাই যায়। আর ঈদগাহ থেকে দূরত্ব মানে কুফরির পথে অগ্রসর হওয়া। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে কুফরি থেকে হেফাজত করুন।

কোরবানি হলো ইসলামী নিদর্শন : কোরবানিকে অন্যান্য ইবাদতের মতো শুধু ওয়াজিব বা আবশ্যক বললে পূর্ণাঙ্গ হক আদায় হবে না; বরং এটা ওয়াজিব হওয়ার পাশাপাশি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বিশেষ নিদর্শন ও স্মৃতি। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘উৎসর্গকৃত উট [গরু, ছাগল, দুম্বা]-কে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ ওলি মার্কেট, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর