চলতি বছরের বন্যা স্মরণকালের সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি বয়ে এনেছে। দেশের সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে। ফসলহানিতে কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার মতো বিপদ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা পুনর্বাসনে রাস্তাঘাট মেরামতেই সরকারকে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। বন্যা রেলপথের ক্ষয়ক্ষতিও ডেকে এনেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ তড়িঘড়ি সংস্কার করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ সংস্কার কাজেও ব্যয় হবে বিপুল অর্থ। কৃষি অর্থনীতি যাতে ভেঙে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে কৃষি পুনর্বাসনে কৃষকদের সহায়তা করতে হবে। চলতি বছর আগাম বন্যায় হাওর এলাকার বোরো ধান উৎপাদন মার খেয়েছে। আমন ধান উৎপাদনও বিঘ্নিত হয়েছে ভয়াবহ বন্যার ছোবলে। বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ থেকে কয়েক কোটি মণ চাল আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চালের দাম মাত্র এক বছরেই ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তরিতরকারির দাম গড়ে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনমানে তা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ব্যাপক কৃষি পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষকরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই উপশম করা সম্ভব হবে। বন্যায় মাছ চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার দীঘি-পুকুর মাছের ঘেরের দুই থেকে তিন লাখ টন মাছ বেরিয়ে গেছে। দেশের মাছের চাহিদার বড় অংশই পূরণ করে মাছ চাষিরা। তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় এ খাতে সরকারকে সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। বন্যায় গবাদিপশু নিয়ে দুর্যোগকবলিত মানুষ বিপাকে পড়েছে। গরু-ছাগলের খাদ্য জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় গবাদিপশু বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে। বন্যার পাশাপাশি নদীভাঙন হাজার হাজার মানুষের জন্য দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। নদীভাঙনে যারা সর্বস্ব হারিয়েছে তাদের ক্ষতি সহজে পূরণীয় নয়। দুর্যোগে হার না মানা বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। বন্যা সমস্যার মোকাবিলায়ও সরকারসহ পুরো জাতিকে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্যার পানি নেমে যেতেই শুরু করতে হবে পুনর্বাসন কার্যক্রম।