শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত কোরবানি

মাওলানা মুহম্মাদ সাহেব আলী

কোরবানির প্রচলন ছিল হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর আমলে। দুনিয়ার প্রথম মহামানব  হযরত আদম (আ.)-এর সন্তান হাবিল ও কাবিলের মধ্যে বিবাহ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে হযরত আদম (আ.) তাদের দ্বন্দ্ব নিরসনের মানসে উভয়কে ইখলাসের সঙ্গে কোরবানি করার নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর মহান রাব্বুল আলামিন তাকওয়ার ভিত্তিতে হাবিলের কোরবানি কবুল করলেন এবং কাবিলের কোরবানি প্রত্যাখ্যান করলেন। আর এভাবেই মানব ইতিহাসে কোরবানির প্রচলন শুরু হয়। মুসলমানরা ঈদুল আজহায় যে কোরবানি দেয়, এর সঙ্গে জড়িত হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তদীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতি। পবিত্র কোরআনের ‘সূরা ছফ্ফা’য় হজরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে— ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহিম তাকে বলল : পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল : পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাকে জবেহ করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম : হে ইব্রাহিম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সত্কর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক জন্তু।’ জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এই তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়। এ সময় নিসাব পরিমাণ মালের মালিক যিনি হবেন তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। বকরি ও দুম্বা হলে একজনে একটি কোরবানি দিতে হবে। আর গরু, মহিষ, উট হলে সাতজন একসঙ্গে কোরবানি দিতে পারবে।

হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে কোরবানি মুসলমানদের জন্য পালনীয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কোরবানির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে লোকসকল! (জেনে রাখ) তোমাদের প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা আবশ্যক।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী)

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না সে ঈদগাহের কাছেও যেন না আসে’। (ইবনে মাজাহ)

উপরোক্ত হাদিসে সামর্থ্যবানদের কোরবানি দেওয়ার যে তাগিদ আল্লাহর রসুল দিয়েছেন তা সংশ্লিষ্টদের অনুসরণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিভাবে কোরবানি করার তওফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর