কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামে শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। শিয়ারা উমাইয়াদের শুধু অবৈধ শাসক হিসেবেই দেখে না তাদের ইসলামবিরোধী হিসেবেও মূল্যায়ন করে। শুধু ইয়াজিদ নয়, ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া (রা.), দাদা আবু সুফিয়ানও তাদের কাছে সমালোচনার পাত্র। শিয়া সম্প্রদায় মনে করে ইসলামের সঙ্গে উমাইয়াদের দ্বন্দ্ব তাদের ইসলাম গ্রহণের পরও অবসান হয়নি। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার শুরুর পর যাদের কাছ থেকে বিরোধিতার সম্মুখীন হন তাদের অগ্রভাগে ছিলেন উমাইয়ারা। মক্কার ইসলামবিরোধী শক্তির নেতৃত্বে ছিলেন কুরাইশদের দুটি প্রভাবশালী গোত্র। এর মধ্যে বনি মাখযুম গোত্র ছিল বেশি শক্তিশালী। এই গোত্রের নেতা আবু জেহেল ছিলেন ইসলাম বিরোধিতায় সবচেয়ে সক্রিয়। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন উমাইয়া গোত্রের অধিপতি আবু সুফিয়ান।
বিধর্মীদের সঙ্গে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ হয় মদিনার নিকটবর্তী বদর প্রান্তে। যুদ্ধে বনি মাখযুম গোত্রের নেতা আবু জেহেলসহ প্রভাবশালী সদস্যরা প্রাণ হারায়। উমাইয়া গোত্রের নেতা আবু সুফিয়ানকে মুসলমানরা আটক করেছে এই ভুল সংবাদের ভিত্তিতে মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মদিনার মুসলমানদের যুদ্ধ বাধলেও যুদ্ধে উমাইয়াদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারে কম। বদর যুদ্ধে বনি মাখযুম গোত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মুসলিমবিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে চলে আসে উমাইয়ারা। উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ান কুরাইশদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি শপথ নেন বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো নারীর শরীর স্পর্শও করবেন না।
বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে কুরাইশরা উমাইয়া নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজার সুসজ্জিত সৈন্য নিয়ে মদিনা অভিমুখে অভিযান চালায়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কার বিধর্মীদের বাধা দিতে ১ হাজার সৈন্য নিয়ে ওহুদ পর্বতের দিকে অগ্রসর হন। যুদ্ধের আগেই মদিনা বাহিনীর অমুসলিম একটি অংশ আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বে ৩০০ সদস্যসহ দল ত্যাগ করে। ৭০০ সদস্য নিয়ে মক্কার কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে মুসলমানদের অংশ নিতে হয়। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চাচা মহাবীর হামজা এই যুদ্ধে শহীদ হন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হেন্দা পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে হামজার লাশের বুক চিরে কলিজা বের করে তা চর্বন করে প্রতিহিংসাপরায়ণতার উদাহরণ সৃষ্টি করেন।শকিলা জাহান