বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

নামাজে ওয়াসওয়াসা

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

যে আমল সবচেয়ে উত্তম সে আমল বিনষ্ট করতে শয়তান সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকে। নামাজের মতো মহান আমলকে নষ্ট করার জন্য শয়তান অনেক রাস্তা অবলম্বন করে থাকে। সুতরাং নামাজ নষ্ট করার জন্য শয়তান বিভিন্নভাবে ধোঁকা দিয়ে থাকে। নামাজে এ ধরনের ওয়াসওয়াসা আসাটা ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত। যা হোক, নামাজে শয়তানের প্ররোচনায় বিবিধ ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি হয়। যার ফলে নামাজে মন বসে না। মন অন্যদিকে ধাবিত হয়। নামাজে ওয়াসওয়াসা দুই কারণে হয়ে থাকে। (ক) অভ্যন্তরীণ কারণ (খ) বহিরাগত কারণ। অভ্যন্তরীণ কারণ : প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই নফস বিদ্যমান থাকে। নফস তিন প্রকার। নফসে মুতমায়িন্নাহ, নফসে লাওয়ামাহ, নফসে আম্মারাহ। যার মাঝে যে নফস প্রবল থাকে, সে ওই নফসের অনুকরণে কাজ করে থাকে।

নফসে মুতমায়িন্নাহ : এটা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকে। কোনো খারাপ বা অপছন্দনীয় কাজ দেখলেই মানুষের বিবেকে ধাক্কা দেয় এর দ্বারা মানুষ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। নফসে লাওয়ামাহ : এটা ভালো কাজের আদেশ করতে পারে না। সাধারণত ইমান রক্ষার লক্ষ্যে গুনাহহীন ও ভ্রান্ত আকিদা থেকে বাঁচিয়ে রাখে। নফসে আম্মারাহ : এটা নেক কাজের আদেশ করে না শুধু খারাপ ও হীন কাজের আদেশ দিয়ে থাকে। এটা মানুষকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। আমর অর্থ আদেশ, আম্মারাহ এটা মুবালাগার ছিগাহ। অর্থ হলো বেশি বেশি খারাপ কাজের আদেশদাতা। অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মূল হলো— নফসে আম্মারাহ বা কুপ্রবৃত্তি। নফসে আম্মারাহ যার মাঝে প্রবল থাকে, তা তাকে একেবারেই ধ্বংস করে দেয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আছে— নিঃসন্দেহে নফস খারাপ ও হীন কাজের আদেশ দিয়ে থাকে। এখানে নফস দ্বারা নফসে আম্মারাহকে বুঝানো হয়েছে। নফসে আম্মারাহ শয়তান থেকেও মারাত্মক। কীভাবে? আমরা জানি যে, শয়তান আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করেছিল। এত নৈকট্য অর্জন করা সত্ত্বেও তাকে বিতাড়িত ও বঞ্চিত করেছে নফসে আম্মারাহ। যার ফলে সে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার অভিশপ্ত হয়ে গেল। সব সৃষ্টিজীবের মাঝে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হয়ে গেল। মোট কথা শয়তানকে শয়তান বানাল নফসে আম্মারাহ। এর পেছনে পড়ে আজ অসংখ্য বুজুর্গও ধ্বংসের শিকার হচ্ছেন। এ কুপ্রবৃত্তি যুবকাবস্থায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

বহিরাগত কারণ : বাইরে ঘোরাফেরার দরুন নামাজে ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি হয়। যার ফলে নামাজে অমনোযোগী ও অন্যমনস্ক হয়ে থাকে। দিবারাত্রিতে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরার দরুন অসংখ্য দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নামাজে দাঁড়ালে ওইসব দৃৃশ্য ভেসে ওঠে। বর্তমান যুগে বাইরে ঘোরাফেরা করে ইমান রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। নামাজে দাঁড়ালেই সেসব চিত্র চোখের সামনে ভাসতে থাকে। এসব অপদৃষ্টি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

            লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর