শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইসলামী হিজরি সন ও মহররমের তাৎপর্য

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

হিজরি ১৪৩৮ সন বিদায়ের পথে। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর বিদায় নেবে অনেক স্মৃতিবিজড়িত এই সনটি। হিজরি সন চালু হয়েছিল আজ থেকে ১৪২১ চন্দ্র বছর আগে। অর্থাৎ যে দিন থেকে হিজরি সনের সূচনা বলে ধরা হয় তার ১৬ বছর পরে প্রকৃত অর্থে এই সন চালু হয়। রসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময়কে মনে রেখে এ সনকে হিজরি সন বলে নামকরণ করা হয়। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরের (রা.) শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে, প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) ইরাকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) খলিফা উমরের (রা.) কাছে পত্র লিখে অভিহিত করেন, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এর ফলে আপনার নির্দেশ বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। অনেক সময় আমরা চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে বিব্রত বোধ করি। হজরত আবু মুসা আশআরির চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা.) এ বিষয়ে পরামর্শ সভার আহ্বান করেন এবং কীভাবে একটি ইসলামী তারিখ প্রবর্তন করা যায় সে বিষয়ে বিশিষ্ট সাহাবা ও জ্ঞানীগুণীদের পরামর্শ চান। পরামর্শ সভায় হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.)সহ বিশিষ্ট সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে হজরত ওমর (রা.) ইসলামী সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। তবে কোন মাস থেকে ইসলামী পঞ্জিকার সূচনা করা হবে তা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। কেউ মত পোষণ করেন রসুল (সা.)-এর জন্মের মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। আবার কেউ কেউ মত পোষণ করেন, রসুলের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা যায়। অন্যদের মতে, রসুল (সা.)-এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ করা হোক। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত ওমর (রা.) হিজরতের বছরকে ইসলামী সনের সূচনা বছর হিসেবে ধরে ওই বছরের মহররম মাস থেকে নতুন হিজরি পঞ্জিকা চালুর সিদ্ধান্ত নেন। হিজরি সনের প্রথম মাস  মহররম একটি বরকতময় মাস। মানব ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কোরআনে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যা এই মাসকে মহিমান্বিত করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মহররম।’ (সূরা তাওবাহ : ৩৬)

মহিমান্বিত মহররম মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। হিজরি সন প্রবর্তনের বেশ পরে মহররমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসুল (সা.)-কে এই দিন (আশুরার) এবং এই মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (মিশকাত শরিফ)

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন’ (তিরমিজি শরিফ)। সোজা কথায় হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ধর্মীয় তাৎপর্যও তুলনাহীন। মহান  আল্লাহ আমাদের আশুরায় রোজা পালনসহ এই পবিত্র মাসে ইবাদত বন্দেগি করার  তৌফিক দান করুন।

            লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর